ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রতিবাদে ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে শত শত লোক বিক্ষোভ করেছে। তারা ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ এবং গাজায় ট্রাম্পের জাতিগত নির্মূলের আকাঙ্ক্ষার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প যখন গাজা অঞ্চলের 'মালিকানা' নেবে বলে হুমকি দিচ্ছিলেন, তখন বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন 'ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়'। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে শুধু আরব বিশ্বেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যার কিছু প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
সৌদি আরব
সৌদি আরব বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ছাড়া তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। তারা ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ট্রাম্পের অবস্থানকে স্পষ্ট এবং আপোষযোগ্য নয় বলে বর্ণনা করেছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েলি বসতি স্থাপন নীতি, ফিলিস্তিনি ভূমি সংযুক্তি বা ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকারের যে কোনো লঙ্ঘনের বিষয়ে সৌদি আরব তার পূর্বে ঘোষিত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছে।
মার্কিন সিনেটর ক্রিস মারফি
ডেমোক্র্যাট সিনেটর মারফি ট্রাম্পের হুমকির সমালোচনা করে বলেন, গাজায় মার্কিন আগ্রাসন হাজার হাজার মার্কিন সেনাকে হত্যা এবং মধ্যপ্রাচ্যকে কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। এটি একটি খারাপ বিষয়, অসুস্থ রসিকতার মতো।
মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন
ডেমোক্র্যাট নেতা ভ্যান হোলেন বলেন, গাজা থেকে ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করে জোরপূর্বক 'মালিকানা' কেড়ে নেওয়ার ট্রাম্পের প্রস্তাবের অন্য নাম 'জাতিগত নিধন'। এই ঘোষণা ইরান ও অন্যান্য শত্রুদের গোলাবারুদ দেবে এবং এ অঞ্চলে আমাদের আরব অংশীদারদের ক্ষতি করবে। ভ্যান হোলেন বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য কয়েক দশকের আমেরিকান দ্বিপক্ষীয় সমর্থনকে অস্বীকার করেছে, কংগ্রেসকে অবশ্যই এই বিপজ্জনক ও বেপরোয়া পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
সিএআইআর (মার্কিন মুসলিম অ্যাডভোকেসি গ্রুপ)
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস বলেছে, গাজা ফিলিস্তিনি জনগণের, যুক্তরাষ্ট্রের নয়। যদি ফিলিস্তিনি জনগণকে কোনোভাবে গাজা থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হয়, তাহলে মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধ ব্যাপক সংঘাতের জন্ম দেবে, আন্তর্জাতিক আইনের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেবে এবং আমাদের জাতির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও অবস্থানের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে দেবে।
রাশিয়া
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, অধিকৃত পশ্চিম তীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলি পরিকল্পনা রয়েছে। গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চীন
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা গাজার জনগণের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতা করে। চীন আশা করে, সব পক্ষ যুদ্ধবিরতি ও সংঘাত-পরবর্তী শাসনকে ফিলিস্তিনি ইস্যুকে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমাধানে ফিরিয়ে আনার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেছেন, তার সরকার দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে, যেখানে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিরা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করেছি, আমরা জিম্মিদের মুক্তিতে সমর্থন করেছি এবং আমরা গাজায় ত্রাণ প্রবেশে সমর্থন করেছি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য নিয়ে আমি চলমান মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক পল ও'ব্রায়েন বলেছেন, গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে নেওয়া মানে মানুষ হিসেবে তাদের ধ্বংস করার শামিল। গাজা তাদের বাড়ি। গাজার মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হচ্ছে ইসরায়েল সরকার হাজার হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে, যাদের বেশিরভাগই মার্কিন বোমা দিয়ে।
হামাস
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা নিয়ে ট্রাম্পের আহ্বান 'আমাদের ভূমি থেকে বিতাড়নের শামিল'। আবু জুহরি বলেন, গাজা নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য হাস্যকর ও অযৌক্তিক এবং এ ধরনের যে কোনো ধারণা এই অঞ্চলকে জ্বালিয়ে দিতে সক্ষম। আমরা এটিকে (পরিকল্পনা) এই অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনা সৃষ্টির একটি রেসিপি হিসাবে বিবেচনা করি। কারণ গাজার জনগণ এ ধরণের পরিকল্পনা পাস হতে দেবে না।
হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানু বলেছেন, আমেরিকার বর্ণবাদী অবস্থান আমাদের জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা এবং আমাদের উদ্দেশ্যকে নির্মূল করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের চরম ডানপন্থী অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন
সংগঠনের মহাসচিব হুসেইন আল-শেখ বলেন, পিএলও ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের মাতৃভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করার সব আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব তার দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করে যে, আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান হল সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা এবং শান্তির গ্যারান্টি।
আ. দৈ/সাম্য