বিদেশি ঋণের অর্থে বিনিয়োগ ও রপ্তানি সহায়ক অবকাঠামো না হলে তা পরিশোধে সমস্যা তৈরি করে। কারণ ঋণের অর্থ ব্যবহারের ফলে যদি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) না আসে, যদি রপ্তানি থেকে ডলার দেশে না আসে, তাহলে ঋণ পরিশোধ বেড়াজালে পড়ে যায়। বিদেশি ঋণ খারাপ কিছু নয়। কথা হচ্ছে, এ অর্থ কোন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই হচ্ছে আসল বিষয়।
বিদেশি ঋণ নিয়ে পরিশোধে সরকারের চাপ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে একনেকের অনুমোদন হওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য জানানোর পাশাপাশি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি কথা বলেন।
একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণ ৭ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশি ঋণ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনামের বিদেশি ঋণ ১০ গুণ বেশি। এ ঋণ পরিশোধে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। বাংলাদেশে সাধারণ অবকাঠামো খাতের প্রকল্পে বিদেশি ঋণের অর্থ ব্যয় হয়েছে বিগত দিনে। অবকাঠামো হয়েছে, মানবসম্পদ হয়নি। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, শিক্ষক নেই। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। কিন্তু মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়নি।
গতকাল একনেকে ১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিতাস ও কামতা ফিল্ডে চারটি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি এ বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা ফিল্ডে ৩-ডি সিসমিক জরিপ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। ব্যয় ধরা হয়েছে।
অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে– চট্টগ্রাম মহনগরীর উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন, মোংলা বন্দরের সুবিধাদি ও সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন; ধান, গম ও ভুট্টার উন্নত বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন; বিএডিসির বিদ্যমান বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ ব্যবস্থাদির আধুনিকীকরণ; ফুড সেইফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট, সিলেট-১২ নম্বর কূপ খনন, ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারি, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন-চট্টগ্রাম জোন, স্ট্রেন্থ সার্ভিস ডেলিভারি সিস্টেমস ফর ইমপ্রুভড মাইগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবল রেইনট্রিগ্রেশন, ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন করা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প।
এর বাইরে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনা (দ্বিতীয় সংশোধিত ও চতুর্থবার মেয়াদ বৃদ্ধি) প্রজেক্ট।
এ ছাড়া পরিকল্পনা উপদেষ্টা অনুমোদিত চারটি প্রকল্প একনেকে অবগতির জন্য তোলা হয়। এগুলো হচ্ছে– প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতা জোরদারকরণ, অ্যাকুয়েট ইকোসিস্টেম কনভারসেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ইন দ্য নর্থ ইস্ট অ্যান্ড সাউথ ওয়েস্ট রিজন অব বাংলাদেশ ইউএসআইডি ইকোসিস্টেম; চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট ব্রিজিং, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন প্রকল্প।
আ. দৈ/ এএস