বর্ষার আগেই ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য করা,ভয়াবহ জলাবদ্ধাতার নিরসন এবং ঢাকার প্রাণ পুরনো ১৯টি খাল উদ্ধারে ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্ত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকার। কারণ বিগত বছরগুলোতে বর্ষাকালে বৃষ্টিরপানিতে এই শহরের অধিকাংশ এলাকা ময়লাপােিত তলিয়ে যায়। ওই সময় নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ ও কষ্ট পোহাতে হয়। যারফলে এবার বর্ষার আগেই নগরীর ১৯টি খালে পানি প্রবাহ ফিরে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘ঢাকা শহরকে যদি মানবদেহ কল্পনা করা হয়, তবে খালগুলো হচ্ছে তার শিরা-উপশিরা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খালগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে, এজন্য খালগুলোকে করতে হবে দূষণমুক্ত, খনন ও সংস্কার।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে আয়োজিত বাউনিয়া খাল প্রান্তে ‘ঢাকা শহরের খালগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করে খালকেন্দ্রিক ব্লু নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত ছয়টি খাল বেগুনবাড়ি, কড়াইল, বাউনিয়া, রূপনগর এবং ডিএসসিসি এলাকায় মান্ডা ও কালুনগর খালের সংস্কার কার্যক্রমের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
খালের সংস্কার কার্যক্রমের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো: নিজাম উদ্দিন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হামিদুর রহমান খান,রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান সরকার (অবঃ), ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ডিএনসিসির প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হাসান, এনডিসি,প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক,প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেঃ জেনাঃ মোঃ মঈন উদ্দিন- এসইউপি, এসপিপি, এনডিসি, পিএসসি, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেঃ জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফিদা হাসান-(ই),পিএসসি,বিএন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শরীফ উদ্দীন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেনেজ সার্কেল) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) খন্দকার মাহবুব আলম,তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আবুল হাসনাত মোঃ আশরাফুল আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং উপ প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মফিজুর রহমান ভূঁইয়াসহ ডিএনসিসির পদস্থ কর্মকর্তারা।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'আমাদের একটা পরিকল্পনা আছে খালের যে পাড়টা আছে ওই পাড়ে আমরা চাষাবাদ করতে পারি কিনা। আমরা চাচ্ছি খালের পাড়গুলোতে আমরা সবুজ ফিরিয়ে আনতে পারি কিনা, আর খালের মধ্যে মাছ আনা যায় কিনা। সেটা আমরা কেমন করে ফিরিয়ে আনবো, কেমন করে আমরা খালের প্রাণ ফিরিয়ে দেব সেই চেষ্টাটা আমরা করবো।' তিনি বলেন, 'এটা আমাদের মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক উদ্যোগ হলেও নগরবাসীকে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে। স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নগরবাসীকে তার খালগুলোকে রক্ষার দাবি তুলতে হবে এবং সেখানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আপনাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে, অধিকারের জায়গা থেকে অধিকারের চর্চাও করতে হবে, দায়িত্বের জায়গা থেকে দায়িত্বও পালন করতে হবে আপনাদেরকে।' উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেনেজ সিস্টেম ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নাগরিকদের বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান।
এদিকে ‘লাল গালিচা’ বিছানোর ব্যাখ্যা দিল ডিএনসিসি:
খাল খনন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘লাল গালিচা’র ব্যবস্থা রাখার ব্যাখ্যা দিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটি বলছে, অতিথিদের নিরাপত্তার জন্য এটি রাখা হয়েছিল। রোববার (০২ জানুয়ারি) ঢাকার মিরপুরে খাল খনন উদ্বোধন করেন অন্তর্র্বতী সরকারের তিন উপদেষ্টা। এদিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লাল গালিচা নিয়ে ব্যাখ্যা দেন। ডিএনসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকালে মিরপুরে বাউনিয়া খালের প্রান্তে সংস্কার (খনন) কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত তিন উপদেষ্টাসহ অতিথিরা বক্তব্য দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কার কাজ উদ্বোধনের জন্য ভাসমান এক্সকাভেটরে ওঠেন।
উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, ভাসমান এক্সকাভেটরে যেতে লাল কার্পেট বিছানোর কারণ কী? এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, যেখানে ভাসমান এক্সকাভেটর রাখা ছিল, তা কোনো স্থায়ী পন্টুন নয়, বরং অস্থায়ী পন্টুনে রাখা ছিল। এ ছাড়া এক্সকাভেটরে ওঠার রাস্তাটি অনেক ঢালু ছিল। তাতে কাদামাটি এবং এক্সকাভেটরের মেঝে পিচ্ছিল থাকায় অতিথিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য এবং চলাচল এলাকা দৃষ্টিগ্রাহ্য করতে একটি লাল রঙের কার্পেট সদৃশ ম্যাট ব্যবহার করা হয়।
ডিএনসিসি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য করেছে যে গণমাধ্যমে এসেছে, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা লাল গালিচায় হেঁটে খালে নামেন এবং ভাসমান এক্সকাভেটরে ওঠে কাজের সূচনা করেন। ’ সংস্থাটি বলছে, এটি কোনো আনুষ্ঠানিক লাল গালিচা নয়, বরং শুধুমাত্র নিরাপত্তার স্বার্থে রাখা একটি ব্যবস্থা। এতে কোনো ধরনের অপব্যয় বা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছিল না। যেহেতু ভাসমান এক্সকাভেটরে ওঠা-নামার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ, তাই ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সবসময় স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও জনস্বার্থের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।