মৃত্যুর পর প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও বিচার মেলেনি গৃহবধূ রিমা হত্যার। ধরা পড়েনি অভিযুক্ত যৌতুক লোভী স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, গত ৭ জানুয়ারি গৃহবধূ লিমার রহস্যজনক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে উধাও স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারা বলেছে সে নিজেই আত্নহত্যা করেছে। কিন্তু এ ঘটনাটি গৃহবধূর বাবার পরিবারসহ পুরো এলাকা মানতে নারাজ।
তাদের দাবী, যৌতুকের টাকা না পেয়ে গৃহবধূটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর স্বামীর পরিবার সাজিয়েছে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যার নাটক। এ মৃত্যুতে নীলফামারীর সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের চকদুবোলিয়া গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী পরিবারসহ এলাকাবাসীর।
৭ জানুয়ারি সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের চকদুবোলিয়া গ্রামে ভোর ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে। নিহত গৃহবধূ তাছলিমা আক্তার লিমা ওই এলাকার ওয়াহেদ আলীর ছেলে মজনু মিয়ার স্ত্রী।
এ ঘটনায় গত শনিবার ( ২৫ জানুয়ারী) নিহত গৃহবধূর বাবা লোকমান হোসেন বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী,শ্বশুর, শাশুড়ি মর্জিনা বেগমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি হত্যা মামলাও দায়ের করেন। কিন্তু বাবার দাবি সেখানেও চলছে কালক্ষেপণ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত গৃহবধূর শ্বশুর বাড়ি যেন এখন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। বাড়িটির আশপাশেও কাউকে যেতে দেখা যায়নি। জনমানবশূণ্য বাড়িটির ভিতরে সব ঘরের দরজায় ঝুলছে তালা।
পাশের বাড়ির আজিনুর ইসলামের স্ত্রী শ্যামলী আক্তার বলেন, আমার বিয়ে হওয়ার তিন বছর হলো আমি কখনো লিমার ব্যবহার খারাপ দেখিনি। আমার সাথেও ভালোভাবে কথা বলতো। কিন্তু হঠাৎ এ ঘটনা আমি মানতেই পারছি না। মনে হয় লিমা এসেছে আমাকে ডাকতে, আমার সাথে কথা বলেত।
এলাকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মজনু মিয়ার বাড়িতে সোরগোল শুনে আমি এগিয়ে দেখি লিমার গলায় ফাঁস লাগানো। কিন্তু সাধারণত ফাঁস হয় মাথার পিছন দিক দিয়ে তার আছে সামনে দিয়ে। পা টেবিলের উপর। আর হাতে আঘাতের চিহ্ন। এসব দেখে আমি নিশ্চিত যে এটা আত্নহত্যা নয় তাকে হত্যা করা হয়েছে।যদি হত্যা না হবে তাহলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন উধাও হবে কেন? আমাদের দাবী দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। যেন পরবর্তীতে এরকম নেক্কারজনক কাজ কেউ করার সাহস না পায়।
নিহত গৃহবধূর বাবা লোকমান হোসেন বলেন, আমার মেয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই নির্যাতন করত তার স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। যৌতুকের টাকার জন্য তাকে মারধর করতো। আমাদের কাছে আসতো আমরা গরু,ছাগল বিক্রি করে ধার-দেনা করে দফায় দফায় প্রায় চার লক্ষ টাকা দিয়েছি। এনিয়ে বিচার-সালিশও হয়েছে। ঘটনার আগে আমার মেয়ে আবার যৌতুকের টাকার জন্য আসে আমরা টাকা দিবো বলে তাকে শ্বশুর বাড়িতে পাঠানোর পরেই মেয়ের লাশ পেলাম। আমরা মেয়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এবিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এম.আর সাঈদ বলেন, এঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছি না।
এমআই