শিবালয়ের জমদুয়ারা গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ায়েছিয়া দরবার শরীফে মহাত্মা পাগল বাজান হাশেম আলী ওয়ায়েছি (র:) এর ৪০তম বাৎসরিক ওরশ । এ উপলক্ষে ৭ দিন ব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দরবার শরীফের ভক্ত-অনুসারীরা। সাতদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত ওরশ মোবারকে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে নানা বয়সী হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সারারাত ব্যাপী আধ্যাত্মিক গান অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনের অন্যতম আকর্ষন ছিলো বিলুপ্তপ্রায় গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ যাত্রা পালা ।
দরবারের পীর সাহেব শাহ্ নাসির ইমতিয়াজ বাবু বলেন, প্রতিবছরের মতো এ বছরও অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন শুক্রবার ছিল মিলাদ মাহফিল, দ্বিতীয় দিন শনিবার মাজার জিয়ারত, তবারক বিতরণ ও বাদ মাগরিব রাত ৯টা থেতে ভাব বৈঠকী গান পরিবেশন করেন চ্যানেল আই সেরা কন্ঠশিল্পী শারমিন, বাউল ভজন ক্ষ্যাপা, ডলি মন্ডল ও স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ, তৃতীয় দিন রোববার পালা গান পরিবেশন করেন কাজল দেওয়ান বনাম লিপি সরকার, চতুর্থ দিন সোমবার জেপি নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশিত ঐতিহাসিক নাটক ‘নবাব সিরাজউদদ্দৌলা’, পঞ্চম দিন মঙ্গলবার পালা গান পরিবেশন করেন বাউল মাতা আলেয়া বেগম বনাম শরিয়ত সরকার, ষষ্ঠ দিন বুধবার গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাট্যপালা ‘ভাষাণ যাত্রা’ এবং সপ্তম দিন বৃহস্পতিবার বিশেষ আধ্যাত্মিক গানের আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় ও ঢাকার শিল্পীবৃন্দ গান পরিবেশন করেন।
মানিকগঞ্জের বিখ্যাত ‘জেপি নাট্যগোষ্ঠী’র পরিবেশিত ঐতিহাসিক নাটকে অভিনয় করেন ‘জেপি গ্রুপের’ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুরতজা পলাশ ও বিভিন্ন জেলার নাট্যশিল্পীবৃন্দ। এছাড়া, ভাষান যাত্রায় শিবালয়ের ঐতিহ্যবাহী যাত্রা শিল্পীরা যাত্রাপালা পরিবেশন করে। ৭দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠান মালায় স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার-হাজার নানা বয়সী দর্শক অংশ নিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। শিল্পীরা নানা রংয়ের, নানা ঢংয়ের পোশাক পরিধান করে ও বিভিন্ন ধরনের অভিনয় করে দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করেন । এ অনুষ্ঠান দেখতে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, শিশুরা উপস্থিত হয়েছিলেন । বিশেষ করে, প্রবীণ বয়সের মানুষ মাঘ মাসের তীব্র শীতের রাতে কষ্ট উপেক্ষা করে প্রতিদিনই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। অনেকেই আবার বিভিন্ন দৃশ্য দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান। আবার মাঝে-মাঝে হাসির অভিনয় দেখে হাসতে-হাসতে অস্থির হয়ে যান। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জমদুয়ারা গ্রাম যেন মানুষে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দরবার প্রাঙ্গণে বিভিন্ন দোকানপাট বসে। চা-পান, ফুসকা-চটপটি ও বিভিন্ন ধরনের খাবার, চুরি-খেলনাসহ নানা ধরনের দোকান থাকায় দরবার এর পাশে যেন মেলায় পরিণত হয়ে যায়। এছাড়া, সবার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে গ্রাম-বাংলার নানা ঐতিহ্য ফুটে উঠে।
দরবারের পীর শাহ্ হাসিবুল হাসান পলক আল ওয়ায়েছি বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সর্বস্তরের ভক্ত ও আশেকানদের সহযোগিতায় এবং উপস্থিতিতে ৭দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং মনোরম পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমি সর্বস্তরের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ওরস মোবারকের সাতদিনের অনুষ্ঠানমালার সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন ‘জেপি গ্রুপে’র সম্মানিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মুরতজা পলাশ।