মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫,
৩ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
জাতীয়
ফারাজের নামে সিনেমা নির্মাণের আড়ালে পাচার ৭৩ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Tuesday, 28 January, 2025, 6:55 PM  (ভিজিট : 130)
ছবিঃ অনলাইন

ছবিঃ অনলাইন

ট্রান্সকম গ্রুপ ‘ফারাজ’ নামে সিনেমা নির্মাণে ভারতে অন্তত ৭৩ কোটি টাকা পাচার করেছে। ২০২০ এবং ২০২১ সালে এই অর্থ পাচার করা হয়। মানি লন্ডারিং বিষয়ে সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। 

ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমানের ছেলে ‘ফারাজ’-এর জীবন নিয়ে এই কল্পকাহিনিভিত্তিক সিনেমাটি ভারতীয়। সেই কল্পকাহিনি নির্মাণের জন্য পুরো টাকা দিয়েছিল ট্রান্সকম গ্রুপ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে ট্রান্সকম গ্রুপ ভারতে এই সিনেমা প্রযোজনার জন্য কোনো টাকা পাঠানোর অনুমতি গ্রহণ করেনি। এমনকি ট্রান্সকম গ্রুপের নথিপত্রেও এ ধরনের কোনো প্রকল্পের কথা উল্লেখ নেই।  

২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিতর্কিত এই সিনেমা নির্মাণের সব টাকা দিয়েছে ট্রান্সকম গ্রুপ ও সিমিন রহমান। এই সিনেমার পরিচালক হানসাল মেহতা ‘ফিল্ম ফেয়ার’ পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন। গত বছরের অক্টোবরে এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। হানসাল মেহতা দাবি করেছেন, এটি একটি ফরমায়েশি সিনেমা। এর পরিকল্পনা, পাণ্ডুলিপি এবং অর্থ সবই দেয়া হয়েছে সিমিন রহমান এবং তার শিল্প গ্রুপের মাধ্যমে।  

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় কয়েকজন বিদেশিসহ ২২ ব্যক্তি মারা যান। ওই জঙ্গি হামলা সারা দেশকে স্তম্ভিত করেছিল। সে সময় জঙ্গিদের সঙ্গে ছিলেন ট্রান্সকম গ্রুপের বর্তমান সিইও সিমিন রহমানের ছেলে ফারাজ। তিনি জঙ্গিদের সহযোগী ছিলেন বলে পরবর্তী সময়ে একাধিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়। 

কিন্তু ঘটনার পরপরই ট্রান্সকম গ্রুপের সিমিন রহমান তার ছেলেকে নিয়ে শুরু করেন সাজানো নাটক। বিপুল অর্থ ঢেলে জঙ্গি ছেলেকে ‘বীর’ বানানোর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে ফারাজ যে একজন জঙ্গি হিসেবে ওখানে নিহত হয়েছিলেন, এই তথ্যটি গোপন করা হয়। এতেও ক্ষান্ত হননি সিমিন রহমান। 

পরে তিনি পুরো ঘটনাটাকে অন্যভাবে সাজানোর জন্য একটি বিতর্কিত সিনেমা তৈরির পরিকল্পনা নেন। এ নিয়ে তাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের ঘনিষ্ঠ নুরুজ্জামান লাভলুকে দায়িত্ব দেয়া হয় এই ঘটনায় ফারাজকে নায়ক বানিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করার। নুরুজ্জামান লাভলু সেই অনুযায়ী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেন। 

এরপর সিমিন রহমান বাংলাদেশের অন্তত দুজন চলচ্চিত্র পরিচালকের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলেন। তাদের এ বিষয়ে সিনেমা তৈরির অনুরোধ করেন। এ সিনেমা নির্মাণের জন্য তাদের বিপুল অর্থ দেয়া হবে বলেও প্রলোভন দেখান। কিন্তু বাংলাদেশের এই দুই পরিচালকের কেউই এতে রাজি হননি। এরপর সিমিন রহমান ভারতে যান। সেখানে একাধিক চিত্রপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন। 

অবশেষে মতিউর রহমান ও মাহ্ফুজ আনামের মধ্যস্থতায় ভারতের তিনজন পরিচালক এ বিষয়ে রাজি হন। পরে মতিউর রহমান, মাহ্ফুজ আনাম ও আনিসুল হকের নেতৃত্বে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। সেই বাছাই কমিটিতে সর্বসম্মতভাবে হানসাল মেহতাকে পরিচালক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হানসাল মেহতা সিনেমাটি নির্মাণের আগে ঢাকায় আসেন। সিমিন রহমানের সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদি চূড়ান্ত হওয়ার পর সিনেমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়।  

সিনেমাটি নির্মাণের ব্যাপারে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তিনটি প্রতিষ্ঠানকে প্রযোজক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো- টি সিরিজ, বেনারস মিডিয়া ওয়ার্কস ও মাহানা কোম্পানি। এর মধ্যে টি সিরিজ ভারতে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয়। বেনারস মিডিয়া ওয়ার্কস অনুভব সিনহার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানও দীর্ঘদিন সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত। মাহানা কোম্পানিটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এই কোম্পানিটি শুধু একটি সিনেমা করেছে, সেটি হলো ‘ফারাজ’। এর আগে-পরে এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় কোনো সিনেমার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত রাখেনি।  

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই মাহানা কোম্পানি হলো সিমিন রহমান এবং তার পুত্র যারাইফ আয়াত হোসেনের একটি ভৌতিক কোম্পানি। যে কোম্পানির মাধ্যমে এই সিনেমাটির অর্থায়ন করা হয়। হানসাল মেহতা নিজেই জানিয়েছেন সিনেমাটি নির্মাণে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি রুপির মতো। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই পুরো অর্থই সিমিন রহমান দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। 

ভারতীয় চলচ্চিত্র বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী টি সিরিজ সিনেমার গানের জন্য স্বত্ব নেয়। আর বেনারস মিডিয়া ছিল পরিবেশক। সিনেমায় এই দুই প্রতিষ্ঠান কোনো বিনিয়োগ করেনি। এই সিনেমাটি খুবই বিতর্কিত এবং হোলি আর্টিজানের মূল তদন্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নির্মাণ করা হয়েছে। সিনেমায় পুরো ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে ফারাজকে এ ঘটনার একজন নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমনভাবে হোলি আর্টিজানের ঘটনা বিকৃত করা হয়েছে, যেখানে দেখানো হচ্ছে যে ফারাজ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু হোলি আর্টিজানের প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, এ ধরনের কোনো ঘটনাই সেখানে ঘটেনি।  

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনুসন্ধান করে দেখেছে, এই সিনেমা নির্মাণের পর্যায়ে সিমিন রহমান ও তার পুত্র যারাইফ আয়াত হোসেন অন্তত পাঁচবার ভারতে গিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, হানসাল মেহতা এবং তার টিম বাংলাদেশে এসেছিল চারবার। এ সময় সিমিন রহমানের বাসায় তারা একাধিক নৈশভোজেও অংশ নিয়েছিলেন। ধারণা করা যায়, এই সিনেমার অর্থ নিতেই হানসাল মেহতা ও তার টিম বাংলাদেশে এসেছিল।  

তাছাড়াও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই সিনেমাটি বাংলাদেশে সুটিং করার জন্য কোনো অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া হয়নি। অথচ আইন অনুযায়ী এ ধরনের যৌথ প্রাযোজনায় কোনো সিনেমা নির্মাণ করতে গেলে বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন লাগে। তৎকালীন দুর্নীতিবাজ তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে যোগসাজশে সিমিন রহমান অনুমতি না নিয়েই এই সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন সিআইডি সিমিন রহমান ও যারাইফ আয়াত হোসেনের অবৈধভাবে ভারতে ৭৩ কোটি টাকা পাচারের বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।  

সিআইডির একটি সূত্র বলেছে, শুধু ‘ফারাজ’ নির্মাণই নয়, প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ওটিটি প্ল্যাটফরম চরকিও তৈরি হয়েছে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে। চরকি প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার বিক্রম দোরাই স্বামীর সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চরকিতে যে ভারত এবং প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের যৌথ অর্থায়ন ঘটেছে সে বিষয়েও সরকারের অনুমতি নেয়া হয়নি। 

চরকির মাধ্যমেও বিপুল অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। এ ব্যাপারে তারা তদন্ত শুরু করেছে। ট্রান্সকম গ্রুপ ও সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। 
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন 

আ. দৈ/সাম্য
   বিষয়:  ট্রান্সকম গ্রুপ   ফারাজ   সিআইডি   মানি লন্ডারিং  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে পুনরায় ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র হামলা জোরদার
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির “ক্লিন স্কুল: নো মসকিটো” কার্যক্রম শুরু
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ, ঝরছে ইবি শিক্ষার্থীদের প্রাণ
কাটমুন্ডু কনফারেন্সে মাতৃভাষায় সাংবাদিকতা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে সার্ক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
৬ শ্রেণির দলিল ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে চিরতরে বাতিল হয়ে যাবে! (ভিডিও)
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা উত্তরের কৃষকদল নেতা রাফেলসহ কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
আগতাড়াইল মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
‘আমার বুড়ো বাপকেও তুই ছাড়িসনি’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাকে গণধোলাই
ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে
বিমান বিধ্বস্তে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যুবক
জাতীয়- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝