দ্বিতীয়বারের মতো চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন, নির্বাচনি প্রচারণার সময় দেয়া তার উচ্চাভিলাষী ও বিতর্কিত প্রতিশ্রুতিগুলো বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, তিনি তার প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা পূরণ করতে পারবেন!
ট্রাম্পের নির্বাচনি অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে রয়েছে- অভিবাসন নীতির কঠোর বাস্তবায়ন, তেল-গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং ট্রান্সজেন্ডার ও শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে তাকে আইনি বাধা, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আনুমানিক ১ কোটি ১০ লাখ অনথিভুক্ত অভিবাসীকে বিতাড়িত করবেন। তিনি এটিকে ‘মার্কিন ইতিহাসের বৃহত্তম বিতাড়ন অভিযান’ বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তিনি জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে আইনি বাধা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী জন্মগত নাগরিকত্ব সুরক্ষিত। এই বিধান পরিবর্তন করতে হলে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হবে, যা কংগ্রেস ও রাজ্যগুলোর অনুমোদন ছাড়া সম্ভব হবে না।
ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। পাশাপাশি, চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিঘ্নিত হলে উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ বাড়ালে ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলেট দাঙ্গায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি তাদের ‘রাজনৈতিক বন্দি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করতে পারে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে’ শেষ করবেন। তবে কিভাবে তা সম্ভব, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি করার চেষ্টা করলে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে তিনি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা বলেছেন। তবে এই অঞ্চলের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ট্রাম্প ‘ড্রিল, বেবি, ড্রিল’ নীতির মাধ্যমে তেল ও গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বাইডেন প্রশাসনের সবুজ অর্থনীতির নীতিগুলো বাতিল করবেন বলে জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দুর্বল করবে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ‘ট্রান্সজেন্ডার পাগলামি’ বন্ধ করবেন এবং শুধু পুরুষ ও নারী লিঙ্গকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেবেন। এছাড়া সমালোচনামূলক বর্ণ তত্ত্ব শেখানো হলে স্কুলগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করার পরিকল্পনাও করেছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ট্রাম্পের এই নীতিগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তাকে বড় ধরনের আইনি ও রাজনৈতিক বাধার সম্মুখীন হতে পারে। তার অনেক পরিকল্পনার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে, যেখানে ডেমোক্রেটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
ট্রাম্পের উচ্চাভিলাষী নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে আইনি বাধা, কংগ্রেসের বিরোধিতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া তার পরিকল্পনাগুলোকে থামিয়ে দিতে পারে। সময়ই বলে দেবে, তিনি তার সমর্থকদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারবেন এবং তার নীতিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতে কী প্রভাব ফেলবে।
আ. দৈ/ সাম্য