বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার মিছিলে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় পুরান ঢাকার প্রভাবশালী নেতা, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৭ আসনের সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন এবং রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। উভয় পক্ষে আবেদন শুনানি শেষে আদালত আসামির বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
জানা যায়, সোমবার (২০ জানুয়ারি) ভোরে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মনসুরাবাদ হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। গত ১৯ জুলাই বিকেল ৫টায় নিউমার্কেটের ১ নং গেটের সামনে গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। নিহত ব্যবসায়ীর শ্যালক আব্দুর রহমান বাদী হয়ে গত ২১ আগস্ট নিউমার্কেট থানায় এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯ জুলাই বিকেল ৫টায় নিউমার্কেটের ১ নং গেটের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল চলছিল। এসময় কিছু আসামির যোগসাজশ ও উসকানিমূলক বক্তব্যে ও সরাসরি নির্দেশে নিরপরাধ মানুষের ওপর গুলি করা হলে ঘটনাস্থলে মাহফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, শামীম উসমান, মো. আবু মূসা, মাঈনুদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, আবির হোসেনসহ অনেক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ও সাধারণ পথচারী আহত হন। আব্দুল ওয়াদুদ (৪৫) নিউমার্কেট থানার প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফেরার পথে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে হত্যাকান্ডে ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যাসহ নানা অপরাধে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
জানা যায়, গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। দুই দিনপর অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর একে একে গ্রেপ্তার হতে থাকেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা।এতোদিন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৮, ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত মহাসচিব ছিলেন। ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। ২০২২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়।
আ. দৈ./ কাশেম