বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫,
২৯ কার্তিক ১৪৩২
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
আইন-আদালত
হাসপাতালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’: সাক্ষী
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Monday, 4 August, 2025, 5:19 PM  (ভিজিট : 109)

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবাতাবিরোধী মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান। সাক্ষ্যে তিনি বলেছেন, পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন- ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট।’

আজ সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই সাক্ষ্য দেন তিনি।

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান।

গুলিবিদ্ধ হয়ে অচল হয়ে যাওয়া বাম পা নিয়ে সাক্ষীর ডায়াসে বসে ইমরান তার সাক্ষ্যে বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরু থেকে কোটাবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। ১৯ জুলাই বিজয়নগর পানির টাংকি এলাকায় আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ আমাদের উপর অতর্কিত গুলি করে। আমি গুলিবিদ্ধ হই ও সেখানে আমার দুই সহযোদ্ধা নিহত হন। আমার বাম পায়ের হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। এরপর আমাকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে কোন প্রাইভেট হাসপাতাল আমাকে ভর্তি করতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়।’ 

‘এখানে চিকিৎসকরা আমার বাম পা কেটে ফেলার কথা বলেন। আমি পা কেটে ফেলার পক্ষে ছিলাম তবে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা পা কাটার অনুমতি দেয়নি। পরে মিডফোর্ড হাসপাতাল থেকে আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। এরপর আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গত বছরের  ২৬ বা ২৭ জুলাই পঙ্গু হাসপাতালে আমাদের দেখতে আসেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আশা উপলক্ষে আগের রাত থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চলতে থাকে হাসপাতালে। এজন্য আমাদের রাতে ঘুমের সুযোগও দেয়া হয়নি। শেখ হাসিনা এসে আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন।

‘তখন আমার সঙ্গে তার কথা হয়। তখন আমি তাকে ম্যাডাম বলে সম্মোধন করলে আপা বলে ডাকতে বলেন। আমি কোথায় পড়াশোনা করি, হলে থাকি কিনা সে সম্পর্কে তিনি জানতে চান। একপর্যায়ে সে বুঝতে পারে আমরা আন্দোলনকারী। সে আমাকে আরও জিজ্ঞাসা করেন যে, তুমি কি দেখেছো পুলিশ তোমাকে গুলি করেছে? আমি বলি যে পুলিশ আমাকে গুলি করেছে। তবে পুলিশের পোশাকে কে ছিল তা আমি জানিনা। আমার পরেও উনি চার পাঁচজনের সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলেন।’

‘পরে উনি যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন হেল্প ডেস্কের কাছে গিয়ে ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ অর্ডার দিয়ে যান।  যা আমি শুনতে পাই। তখন বুঝিনি তিনি এটা বলে কি বুঝিয়েছেন।’

সাক্ষ্যে ইমরান আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে আমার ঠিকঠাক ট্রিটমেন্ট দেয়া হচ্ছিল না। আমার পাটা পচে যাচ্ছিল। গন্ধে আশেপাশে কেউ থাকতে পারতো না। হাসপাতালে সাপ্লাই করা এন্টিবায়োটিক আমার শরীরে কাজ করছিল না। কিন্তু বাইরে থেকে কিনে আনারও অনুমতি ছিল না। তখন আমার বাবা আমাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজের চেষ্টা করে কিন্তু আমাকে রিলিজ দেয়া হয়নি। পরে আমি বুঝতে পারি শেখ হাসিনার ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ অর্ডারের ফলে আমাকে রিলিজ দেয়া হচ্ছে না। তারা চাচ্ছিল আমার পা টা কেটে ফেলে পরবর্তীতে জেলে পাঠাতে। 

তবে গত ৫ আগস্টের পর হাসপাতালের সাধারণ বেড থেকে কেবিনে নেয়া হয়। এখন যথাযথ চিকিৎসা চলছে। এখন পর্যন্ত আমার পায়ে ২৫টি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। তবে আমার বাম পাটা মুভমেন্ট হয় না, এটা কখোনও সুস্থ হবে না বলে জানান ইমরান।

একপর্যায়ে, সাক্ষী আব্দুল্লাহ আল ইমরান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, আমার এই অবস্থার জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজি দায়ী। কারণ তারাই গুলির নির্দেশ দেয় সে কারণে পুলিশ গুলি করে। 

এই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর তাকে জেরা করা হয়। জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

আজ ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউসন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম শুনানি করেন। একসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

গতকাল এই মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পর ট্র্যাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দেন খোকন চন্দ্র বর্মন। তিনি গত বছরের ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় তার সামনে সংঘটিত হতাহতের ঘটনা ও গুলিতে নিজের মুখমণ্ডল বিকৃত হওয়ার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। পরবর্তীতে গতকাল তাকে জেরা করা শেষ হয়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দু’টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।

আ.দৈ/আরএস



   বিষয়:  হাসপাতালে   শেখ হাসিনা   বলেছিলেন   নো রিলিজ   নো   ট্রিটমেন্ট   সাক্ষী  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ডিএনসিসির নগর ভবনের সামনে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের অবস্থান
বিএনপি-জামায়াত বিভাজন, মাঠে আ. লীগের সুযোগ: নাসিরুদ্দিন
এআই’র সাহায্যে লকডাউন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ: এ্যানি
দেশি মুরগি না খাওয়ার’ শিক্ষিকার স্বামী ৫ তলা বাড়ির মালিক
সনদের বাইরে পদক্ষেপের জন্য দায়ভার নিচ্ছে না বিএনপি: আমীর খসরু
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ; সম্পাদক উবাইদা
রাজধানীতে ফায়ার সার্ভিসের গেটের পাশে বাসে অগ্নিকাণ্ড
আ’লীগের ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি,সর্তক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
দিল্লি হামলার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি সঠিক নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অপহ্নত ক্যামব্রিয়ান শিক্ষার্থী সুদীপ্তর লাশ উদ্ধার,গ্রেপ্তার-২
আইন-আদালত- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাসুদ আলম
প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝