ভারতে পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়কে দোষী ঘোষণার পর এবার সাজা দেয়া হল। তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন শিয়ালদহের অতিরিক্ত দায়রা জজ অনির্বাণ দাস। সাজা ঘোষণার রায়ে বিচারক বলেছেন, আরজি করে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ নয়।
সঞ্জয়কে আরজি কর মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল শিয়ালদহ আদালত। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩(১) ধারায় তার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছিল।
আজ সোমবার বিচারক জানান, তিনটি ধারাতেই সঞ্জয়কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। আমৃত্যু জেলে থাকতে হবে তাকে। এর পরেই বিচারক জানিয়ে দেন, এ ঘটনাকে তিনি ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে মনে করছেন না।
তবে আদালতের এ সিদ্ধান্তে খুশি নন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। মায়ের দাবি, এ ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সিবিআই। সেই কারণেই বিচারক সঞ্জয়কে সর্বোচ্চ শাস্তি দেননি। বিচারক পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নিহতের বাবা-মাকে ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
যদিও আদালত কক্ষে থাকা নিহত নারী চিকিৎসকের বাবা-মা হাত জোড় করে বলেন, তারা ক্ষতিপূরণ চান না, তারা চান ন্যায়বিচার। বিচারক জবাবে বলেন, তিনি আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছেন। তারা যেভাবে চান সেভাবে এই অর্থ ব্যবহার করতে পারেন। বাবা মায়ের উদ্দেশে বিচারক আরও বলেন, আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার।
এদিকে, সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন (আমৃত্যু) কারাদণ্ড ছাড়াও তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার ৫০ হাজার টাকা না দিলে পাঁচ মাস অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ সিভিককে। আদালতের রায় শুনে ভেঙে পড়েন দোষী সঞ্জয় রায়। বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকেন তিনি। সঞ্জয়ের আইনজীবী তাকে বলেন, আপনার মৃত্যুদণ্ড নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হল। এটা শুনে সঞ্জয় বলেন, আমার তো বদনাম হয়ে গেল।
ওদিকে আরজি কর-কাণ্ডের রায় শুনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি দোষীর ফাঁসি চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা ফাঁসির দাবি করেছিলাম। আমাদের হাতে কেসটা থাকলে অনেক আগেই ফাঁসির অর্ডার করে নিতাম।
এর আগে, গত বছর আগস্টে কলকাতায় এই চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা পুরো ভারতকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। ঘটনার বিচার চেয়ে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গ বেশ কয়েক মাস ছিল উত্তাল। নিহত চিকিৎসক ৮ আগস্ট পর্যন্ত টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, ওইদিন রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন সকালে তার জুনিয়র সহকর্মীরা সেই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। নিহত তরুণীর পরিবার জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে।
পরে অবশ্য তীব্র ক্ষোভের মুখে পুলিশ এই ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সঞ্জয় নামের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে সিবিআই। সিবিআই তদন্ত নিয়ে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেন নিহতের মা-বাবা। তাদের দাবি, সিবিআই একমাত্র সঞ্জয় রায়কেই দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে; আদতে তারা কোনো কাজ করেনি। তারা এও বলেন, সঞ্জয় দোষী, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ঘটনায় আরও অনেকে যুক্ত আছেন, যাদের ধরা হচ্ছে না।
আ. দৈ/ সাম্য