রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫,
১ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
অর্থ-বাণিজ্য
জমা রাখা টাকা ফেরত দিতে তাপসের ব্যাংকের গড়িমসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Friday, 17 January, 2025, 6:34 PM  (ভিজিট : 89)
ছবিঃ অনলাইন

ছবিঃ অনলাইন

স্থায়ী আমানত (এফডিআর) হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জমা রাখা টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করছে মধুমতি ব্যাংক। লিখিত ও মৌখিকভাবে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ব্যাংকটি চাহিদার সব অর্থ ফেরত দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করপোরেশনের কর্মকর্তাদের। কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকের এমন গড়িমসির কারণে উন্নয়নকাজের ঠিকাদারদের জামানতের টাকা যথাসময়ে ফেরত দিতে পারছে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ (ডিএসসিসি)। পাশাপাশি উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নেও সমস্যার মুখে পড়ছে সংস্থাটি। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটির হিসাব বিভাগ সূত্র বলছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হওয়ার পর এ করপোরেশনের বার্ষিক রাজস্বের প্রায় অর্ধেক মধুমতি ব্যাংকে রাখা হতো। সবশেষ অর্থবছরে (২০২৪–২৫) করপোরেশনের মোট জমা অর্থের প্রায় ৪৬ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪৩ কোটি টাকা এ ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা ছিল। এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্পের আরও ৪২৩ কোটি টাকা ব্যাংকটিতে রেখে আত্মগোপনে যান তাপস।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত মধুমতি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রয়েছে ৩২৩ কোটি টাকা। এর ১৪৫ কোটি ঠিকাদারদের জামানতের। বাকি ১৭৮ কোটি বাজার সালামী, সাধারণ তহবিলসহ অন্যান্য খাতের স্থায়ী আমানত। নানা অজুহাত দেখিয়ে মধুমতি ব্যাংক সময়ক্ষেপণ করছে। কেন টাকা দিচ্ছে না, জানতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তলব করা হলেও তিনি আসেননি। তারা আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু যথাসময়ে টাকা দিচ্ছে না। টাকা ফেরত দিতে আরও গড়িমসি করলে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে।

করপোরেশনের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদারদের কাজের বিল ও জামানত বাবদ ওই টাকা যথাসময়ে পরিশোধ না করে নানা অজুহাতে মধুমতি ব্যাংকে রাখতেন তৎকালীন মেয়র তাপস। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঠিকাদারদের বিল ও জামানতের টাকা দেয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এ টাকা দিতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত আনতে হচ্ছে।

ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তোলার অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসকের নির্দেশে ১০ ডিসেম্বর ১৪৪ কোটি টাকা চেয়ে মধুমতি ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়। তবে টাকা দিতে সময়ক্ষেপণ করে ব্যাংকটি। পরে আরও কয়েকবার তাগাদা দিলে ৫ দফায় ১৩৬ কোটি টাকা দেয় তারা। এখনো ৮ কোটি টাকা দেওয়া বাকি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞা বলেন, মধুমতি ব্যাংক টাকা দিতে গড়িমসি করছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা সময়ক্ষেপণ করছে। কেন টাকা দিচ্ছে না, জানতে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তলব করা হলেও তিনি আসেননি। তারা আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু যথাসময়ে টাকা দিচ্ছে না। সিটি করপোরেশন যখন টাকা চাইবে, তখন এ টাকা ফেরত দিতে ব্যাংক বাধ্য জানিয়ে করপোরেশনের এ কর্মকর্তা বলেন, টাকা ফেরত দিতে আরও গড়িমসি করলে আইনের আশ্রয় নেবেন তাঁরা।

সিটি করপোরেশনের হিসাব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের আগপর্যন্ত স্থায়ী আমানত ও প্রকল্পের জমা অর্থ মিলিয়ে মধুমতি ব্যাংকে দক্ষিণ সিটির ৯৬৬ কোটি টাকা ছিল। মূলত উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে চালিয়ে ও ঠিকাদারদের জামানতের টাকা যথাসময়ে না দিয়ে এসব টাকা ব্যাংকটিতে জমা রাখা হতো। এ নিয়ে আগে ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পাননি। অবশ্য মধুমতি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হাসান খান বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অভিযোগ সত্য নয়। পর্যায়ক্রমে সিটি করপোরেশনকে টাকা দেয়া হচ্ছে। আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।’

২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া মধুমতি ব্যাংকের উদ্যোক্তা মূলত শেখ ফজলে নূর তাপস। তখন এটি ‘তাপসের ব্যাংক’ নামে পরিচিতি পায়। এখনো তিনি ব্যাংকটির পরিচালক।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য বলছে, রাজধানী ও কেরানীগঞ্জে ব্যাংকটির ১০টি শাখায় করপোরেশনের টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা হয়েছিল। শাখাগুলো হচ্ছে—মিটফোর্ড, মতিঝিল, বংশাল, ধানমন্ডির শেখ কামাল সরণি, উত্তরা, আগানগর, গুলশান, ভিআইপি রোড, বাংলামোটর ও প্রগতি সরণি। এ ছাড়া নগরবাসীর কাছ থেকে নেয়া গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্সের বেশির ভাগ টাকাও এ ব্যাংকের মাধ্যমে নেয়া হতো। গ্রাহকেরা যাতে ব্যাংকটির মাধ্যমে লেনদেন করতে পারেন, সে জন্য মেয়র থাকাকালে করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবন ও দক্ষিণ সিটির আঞ্চলিক কার্যালয়ে মধুমতির ছয়টি বুথ স্থাপন করে গেছেন তাপস।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘আমানতের টাকা ফেরত দিতে মধুমতি ব্যাংকের গড়িমসি করা প্রমাণ করে দেশের ব্যাংকগুলো রুগ্ণ অবস্থায় আছে। সিটি করপোরেশনের টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করার কারণ হয়তো এমনটা হতে পারে যে সব টাকা দিয়ে দিলে তারা ব্যাংক চালাতে পারবে না।’

দেশের ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য ভালো করার পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি কেউ যদি টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করে তাদের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

আ. দৈ/ সাম্য 
   বিষয়:  এফডিআর   দক্ষিণ সিটি করপোরেশন   মধুমতি ব্যাংক   শেখ ফজলে নূর তাপস  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ভারতে ১৫০ পর্যটক নিয়ে ভেঙে পড়ল সেতু, স্রোতে ভেসে গেছেন অনেকে
ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ২৪৯
ইসরাইলি আগ্রাসন প্রতিরোধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান
কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় ও দক্ষিণখানের কাওলায় রাজউকের মোবাইল কোর্ট
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন: ইশরাক
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আগতাড়াইল মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
ঢাকা উত্তরের কৃষকদল নেতা রাফেলসহ কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
‘আমার বুড়ো বাপকেও তুই ছাড়িসনি’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাকে গণধোলাই
ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে
বিমান বিধ্বস্তে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যুবক
অর্থ-বাণিজ্য- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝