মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে আগামী সোমবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউসের মসনদে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ এবং আমেরিকান ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্ময়কর রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সূচনা করবেন তিনি।
ঐতিহ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিষেকের দিনটি মূলত আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে থাকে। সেদিন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউস ছেড়ে যান এবং অন্যজন প্রবেশ করেন। রিপাবলিকান দলীয় ট্রাম্প তার মেয়াদ শুরুর প্রথম দিনেই সীমান্ত সুরক্ষা থেকে তেল ও গ্যাস উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের দিনের আয়োজন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে,
• অভিষেক কখন?
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের কাছে মার্কিন ক্যাপিটল ভবনের সামনে আগামী সোমবার (২০ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বেলা ১২টায় শপথ নেবেন ট্রাম্প। এরপর অভিষেক ভাষণ দেবেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দেশকে আরও ওপরে নিয়ে যেতে এবং ঐক্যবদ্ধ করতে চান।
দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেন বলেছেন, তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সাক্ষী হওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
ক্যাপিটল ভবনের মাঠে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী মার্কিন জয়েন্ট কংগ্রেসনাল কমিটি বলেছে, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি টিকেট ছাড়া হবে। এছাড়া ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসে আরও প্রায় আড়াই লাখ মানুষ এই অভিষেক অনুষ্ঠান দেখার জন্য জড়ো হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির সংগীত তারকা ক্যারি আন্ডারউড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
• আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কাদের?
এবার নজির ভেঙে কয়েকজন বিদেশি নেতাকে নিজের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ঐতিহাসিকভাবে নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদেশি নেতাদের অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে কূটনীতিকদের পাঠানোর রেওয়াজ রয়েছে। তবে এবারের অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের শক্তিশালী মিত্র আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলি বলেছেন, তিনি হোয়াইট হাউসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আর ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক ও অ্যামাজনের নির্বাহী চেয়ারম্যান জেফ বেজোস এবং মেটার সিইও মার্ক জুকারবার্গ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসাবে অংশ নেবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
• প্যারেড টু দ্য হোয়াইট হাউস
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ থেকে মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে হোয়াইট হাউসের দিকে এগিয়ে যাবেন। এ সময় তার গাড়ি বহরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সৈন্য, ব্যান্ড দল ও নাগরিক বিভিন্ন গোষ্ঠী থাকবে। পরে নতুন প্রেসিডেন্ট ও আমন্ত্রিত অতিথিরা মঞ্চে বসে প্যারেডের বাকি অংশ পর্যবেক্ষণ করবেন।
• কাজের পরিকল্পনা
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের প্রথম দিনের কর্ম পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত দু’টি সূত্র বলেছে, প্রথম দিনের ব্যাপকসংখ্যক নির্বাহী আদেশ ও নির্দেশের সূচি তৈরি করছেন ট্রাম্প। প্রথম দিন ও তারপরে মিলিয়ে এই সংখ্যা শতাধিক হতে পারে।
• আরও যা হচ্ছে
চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ও আগামী সোমবার ওয়াশিংটনজুড়ে কমপক্ষে ১৮টি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে; যার মধ্যে তিনটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যোগ দেবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অভিষেক অনুষ্ঠানের আগের দিন রোববার ওয়াশিংটন শহরের কেন্দ্রস্থলে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ শীর্ষক বিজয় র্যালির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল ভবনের দাঙ্গার পর ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ট্রাম্পের প্রথম সমাবেশ এটি।
• খরচ মেটাবে কারা?
অনুষ্ঠানের অর্থায়ন করা হবে ট্রাম্পের অভিষেক কমিটির পক্ষ থেকে; যার নেতৃত্বে রয়েছেন ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র স্টিভ উইটকফ। মার্কিন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার স্টিভ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়াও অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যয় বহন করছেন সাবেক সিনেটর ও ট্রাম্পের নিয়োগ করা ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের প্রধান কেলি লোফেলার। রিপাবলিকান পার্টির অভিষেক কমিটি ক্যাপিটলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ব্যতীত অন্য সব অনুষ্ঠানে অর্থায়ন করবে। শপথ অনুষ্ঠানের ব্যয় বহন করা হবে জনগণের করের অর্থে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে।
জেফ বেজোস ও মার্ক জুকারবার্গ অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রত্যেক কমিটিকে এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার করে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া অ্যাপলের সিইও টিম কুক ও ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান, উবারের সিইও দারা খোসরোশাহীও তহবিলে এক মিলিয়ন ডলার করে সহায়তা করছেন।
২০১৭ সালে অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প রেকর্ড ১০৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। এবারে রিপাবলিকান কমিটি ১৭০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সংগ্রহ করেছে বলে দেশটির গণমাধ্যম খবর দিয়েছে।
আ. দৈ/ সাম্য