দেশ থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতে ৫ আগস্ট থেকে একের পর এক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
জানা গেছে, অর্থপাচার রোধে গত পাঁচ মাসে ১১২টি মামলায় ৩৬৬ জন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এই ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসেবে রয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। যেসব ব্যাংক হিসাবে অনিয়ম পাওয়া গেছে বা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে আর্থিক এ গোয়েন্দা সংস্থাটি।
এছাড়া পুঁজিবাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা জব্দ করেছে বিএফআইইউ। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানরই ছয় হাজার ৮০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ শেয়ার জব্দ করা হয়েছে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, বিদেশে পাচার করা অর্থ সনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এসব হিসাব থেকে বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার হয়েছে কিনা, তা তদন্তে মাঠে নেমেছে সংস্থাটি। পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে, অর্থ ফেরত আনা অনেকটাই সম্ভব বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু ব্যাংক হিসাব জব্দ করলেই অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, প্রয়োজন কূটনৈতিক তৎপরতা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) এর তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ কোটি টাকা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব অর্থ ফেরত আনতে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্তর্র্বতী সরকার। এরই অংশ হিসেবে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বিএফআইইউ।
সংস্থাটির তথ্য মতে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৬৬ শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। সংস্থাটি বলছে, এসব হিসাবের মাধ্যমে সন্দেহজনক ব্যক্তিরা যাতে আর্থিক লেনদেন করতে না পারে, তার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব হিসাব থেকে অর্থপাচার হয়েছে কিনা বা কি উপায়ে হয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত করছে সংস্থাটি।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে অর্থ আদায়ে কত সময় লাগবে তার কোনো ধারণা আমাদের দেওয়া হয়নি। বিষয়টিতে বিভিন্ন দেশের আইনি প্রক্রিয়া জড়িত আছে, মামলার বিষয় আছে। এতে করে পুরো কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত আনার উদাহরণ নেই বললেই চলে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, যে বা যারা অর্থপাচার করে তারা এত বোকা না যে, ব্যাংকের যে হিসাব জব্দ হতে পারে সেই হিসাবে তারা বেশি টাকা রাখবে। অফিসিয়াল কোনো চ্যানেল থেকে আসলে অর্থপাচার করাও হয় না। অর্থপাচার রোধে পাচারকারীর দেশে ব্যবসা বন্ধ করা, বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বন্ধ করা যেতে পারে।
আইনি প্রক্রিয়ায় অর্থ অপব্যবহার হয়েছে বলে প্রমাণিত হলে জব্দকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। তবে মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হলে হিসাব ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএফআইইউ। বিএফআইইউ-এর উপপ্রধান একেএম এহসান বলেছেন, ‘যদিও এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, তহবিলের অবস্থান চিহ্নিত করা হলে, তাদের ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আ. দৈনিক/ কাশেম/ রমজান