ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় জমিদার আমলের জমির পরিমাপের সৃষ্ট বিরোধ মিমাংসাকল্পে সৃষ্টি শক্তি পরিক্ষার বিষয়টি আজ গুটি খেলায় পরিনত হয়েছে। প্রতি বছর পৌষের শেষ বিকালে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় এই খেলাটি। খেলায় কোন পুরস্কার না থাকলেও ২৬৬ তম গুটি খেলার আসরকে ঘিরে সাজসাজ রব বিরাজ করছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের জমিদার আমলের তালুক-পরগনা সীমানার বড়ই আটা নামক স্থানে পৌষের শেষ বিকাল মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) অনুষ্ঠিত হবে খেলাটি।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক বাড়ীতে এসেছে আত্নীয় স্বজন মেহমান । শিশুদের জন্য কেনা হচ্ছে নতুন জামা কাপর। ঠিকঠাক করে সুর তোলা হচ্ছে পুরনো বাদ্যযন্ত্রে। পিঠাপুলি বানানোর সমস্ত আয়োজন শেষ করছেন গৃহবধূরা। উৎসবে আশ পাশের গ্রামে পাড়া মহল্লায় জবাই করা হয়েছে দুই শতাধিক গরু। উপলক্ষ্য মঙ্গলবার পৌষের শেষ বিকালে ২৬৬ তম ঐতিহ্যবাহী গুটি খেলা শুরু হয় বিকাল চারটায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার দেওখোলা ইউনিয়নের লক্ষীপুর জমিদার আমলের তালুক-পরগনা সীমানায়।
এই দিনটি অনুষ্ঠানের জন্য এমনভাবে নির্ধারিত যে নতুন করে আর কোনো দিনক্ষণের প্রয়োজন পড়ে না। সময়মতো লাখো মানুষের জমায়েত ঘটে চিরচেনা এই খেলার মাঠে।পিতলের তৈরি ১ মণ ওজনের গুটি করায়াত্ত করে নিজ গ্রামে নিয়ে গুম করা পর্যন্ত চলে এই খেলা। আর এই খেলাকে কেন্দ্র করে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার গ্রামে গ্রামে চলে অন্যরকম উৎসাহ উদ্দীপনা। গোটা পরিবেশ হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। ফুলবাড়ীয়ার লক্ষীপুর ও দশ মাইলের মাঝামাঝি বড়ই আটা বন্ধে (মাঠে) খেলার কেন্দ্রস্থল। বিকেল চারটার দিকে খেলা শুরু হয়। সকাল থেকে ফুলবাড়ীয়া ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ত্রিশাল, মুক্তাগাছা উপজেলার লোকজন আসতে থাকে লক্ষ্মীপুর বড়ই আটা বন্ধে। সড়কের অদূরে ভাটিপাড়া, বালাশ্বর, তেলিগ্রামের সংযোগস্থল নতুন সড়কে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
জানা যায়, মুক্তাগাছার জমিদার রাজা শশীকান্তের সাথে ত্রিশালের বৈলরের হেম চন্দ্র রায় জমিদারের জমির পরিমাপ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জমিদার আমলের শুরু থেকেই তালুকের প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল ১০ শতাংশে, পরগনার প্রতি কাঠা জমির পরিমাপ ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে। একই জমিদারের ভূখণ্ডে দুই নীতির প্রতিবাদে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। জমির পরিমাপ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসার জন্য লক্ষ্মীপুর গ্রামের বড়ই আটা নামক স্থানে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় এই গুটি খেলার। শর্ত ছিল, গুটি যে দিকে যাবে তা হবে তালুক, পরাজিত অংশের নাম হবে পরগনা। জমিদার আমলের গুটি খেলায় মুক্তাগাছা জমিদারের প্রজারা বিজয়ী হন। তালুক পরগনার সীমান্তে জিরো পয়েন্টে ব্রিটিশ আমলে জমিদারী খেলার গোড়াপত্তন।আমন ধান কাটা শেষ, বোরো ধান আবাদের আগে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য জমিদারদের এই পাতানো খেলা চলছে বছরের পর বছর ধরে।
ঐতিহ্যবাহী খেলাটির নেই কোন রেফারী- নেই কোন খেলার শেষ সময়। জিত্তই আবা দিয় গুডি ধররে... বল একমণ ওজনর পিতলর গুটির উপর হুমরি খেয়ে পড়ে শতশত খেলোয়াড়।
স্থানীয় গিয়াস উদ্দিন বলেন, এই গুটি খেলা আমি ছোট থেকে দেখে আসছি। আমরা এলাকাবাসী অনেক আনন্দ উপভোগ করি যা ঈদে এমন আনন্দ হয় না।
এ গুটি খেলার একমন ওজনর পিতলের গুটিটি বংশানুক্রমিক ভাব সংরক্ষন কর আসছ লক্ষীপুরর মোড়ল পরিবার। মোড়ল পরিবারর গুটি সংরক্ষক আবু মিয়া জানান, তার দাদা এ গুটি সংরক্ষন করছেন। করেছেন তার পিতাও।
আ. দৈ. /কাশেম/এনায়েত