সামরিক আইন জারির দায়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ইতিমধ্যে অভিশংসিত হয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাড়তে যাচ্ছে তার বার্ষিক বেতন। দেশটির সরকার এই তথ্য জানিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য মানদণ্ড অনুসারে, ইউনের বেতন ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৬২.৬ মিলিয়ন ওন (১ লাখ ৭৯ হাজার ডলার; ১ লাখ ৪৭ হাজার পাউন্ড) হবে।
গত ডিসেম্বরে তার অভিশংসনের পর থেকে ইউন বিদ্রোহ এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছেন, ফলে দেশে আরো রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালতে অভিশংসনের অনুমোদন না আসা পর্যন্ত প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদেই থাকছেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তারের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
ইউন তার সামরিক আইন ঘোষণার ন্যায্যতা প্রমাণের জন্য ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করেছেন। তবে দ্রুত তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে তার সামরিক আইন ঘোষণার পদক্ষেপ বাইরের হুমকির কারণে নয়, বরং তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে নিয়েছিলেন। ইউনের বেতন বৃদ্ধির খবর দক্ষিণ কোরিয়ানদের মধ্যে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না এই খবর।
তারা বলছেন, বরখাস্ত অবস্থায়ও তাকে কেন বেতন দেয়া হচ্ছে, বেতন বৃদ্ধি তো দূরের কথা। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে উল্লেখ করেন, ইউনের তিন শতাংশ বেতন বৃদ্ধি দেশটির ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির হারের প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি।
হাজারো লাইক পাওয়া এক্স-এর একটি পোস্টে এক ব্যবহারকারী উল্লেখ করেন, ‘ন্যূনতম বেতন এক দশমিক সাত শতাংশ বাড়ল আর তিনি কোন যুক্তিতে (ইউন) তিন শতাংশ বেতন-বৃদ্ধি পেলেন।
এই মাসের শুরুতে ইউনের নিরাপত্তাকর্মীরা তদন্তকারীদের রাষ্ট্রপতির বাসভবনে ঢুকতে বাধা দেন। অচলাবস্থার কারণে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে প্রাথমিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু স্থানীয় একটি আদালত তা বাড়িয়ে দেন।তদন্তকারীরা ইউনকে গ্রেপ্তারের আরেকটি প্রচেষ্টার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং পুলিশের কাছে সহায়তা চেয়েছেন।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউনকে গ্রেপ্তারের যেকোনো প্রচেষ্টায় হতাহত বা রক্তপাত এড়াতে হবে। তারা সতর্ক করে দিয়েছে, নিরাপত্তা কর্মী এবং আইন প্রণেতারা যদি গ্রেপ্তারে বাধা দেন, তবে তাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
ইউনের আইনজীবীরা বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অফিসার এবং তদন্তকারীদের দায়িত্ব দেওয়া জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। তারা দাবি করেছেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ‘অবৈধ’।
এদিকে রাজধানী সিউলে হাজার হাজার মানুষ ইউনের সমর্থনে এবং বিপক্ষে উভয় ক্ষেত্রেই বৃহৎ আকারের বিক্ষোভ করছে। ইউনের অভিশংসনের পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন হান ডাক-সু। উল্লেখ্য, ক্ষমতা গ্রহণের পর দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে হান ডাক-সুকেও অভিশংসন করা হয়েছে। তার বার্ষিক বেতনও তিন শতাংশ বেড়ে ২০ কোটি ৪০ লাখ ওন (এক লাখ ৩৮ হাজার ডলার) হয়েছে।
আ. দৈ/ সাম্য