দেশের আলোচিত দুর্নীতি গ্রস্ত অর্থিক প্রতিষ্ঠান 'পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের' সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সারাফত, স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদ, ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সারাফাতের নামে থাকা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৮টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। একই সাথে পাশাপাশি নাফিজ সারাফত ও আঞ্জুমান আরা শহিদের নামে থাকা জমিসহ বাড়ি,ফ্ল্যাট, প্লটও জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে অনুসন্ধান টিমের প্রধান উপপরিচালক মাসুদুর রহমানের দায়ের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ জারি করেছেন। গণমাধ্যমকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন,দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমির হোসেন।
তিনি বলেন, স্থাবর সম্পদ জব্দের তালিকায় রয়েছে অভিযুক্ত নাফিজ সারাফাতের নামে গুলশানের ২০তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি, গুলশানের একটি ফ্ল্যাট, ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বাজারের চারটি ফ্ল্যাট, নিকুঞ্জ উত্তর আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ, নিকুঞ্জের দুটি ফ্ল্যাট, বাড্ডার কাঁঠালদিয়ার আড়াই কাঠার ফ্ল্যাট, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের দুটি ১০ কাঠা করে ২০ কাঠা জমি, গাজীপুর সদরে ৮.২৫ শতাংশ জমি, নিকুঞ্জের জোয়ার সাহারায় ৪.৯৫ শতাংশ জমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রাজউক পূর্বাচল প্লটে সাড়ে ৭ কাঠা জমি রয়েছে।
এ ছাড়া অভিযুক্ত নাফিজ সারাফাতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাড়ে সাত কাঠা জমির ওপর চারতলা বাড়ি, পান্থপথে একটি ফ্ল্যাট, গুলশান লিংক রোডে একটি ফ্ল্যাট , মিরপুর ডিওএইচএসে একটি ফ্ল্যাট, শাহজাদপুরে একটি ফ্ল্যাট ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ, নিকুঞ্জে তিন কাঠা জমি, বাড্ডার কাঁঠালদিয়ায় আড়াই কাঠা নাল জমি ও গাজীপুর সদরে ৮.২৫ শতাংশ চালা জমি রয়েছে।
নাফিজ সারাফাতের ছেলে চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সারাফাতের নামে বনানীতে থাকা তিনটি ফ্ল্যাট ও বারিধারায় থাকা চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের অনুসন্ধান টিমের আবেদনের পক্ষে আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। পরে আদালত অভিযুক্ত চৌধুরী নাফিজ সারাফত ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা এসব সম্পদ জব্ধে আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়, নাফিজ সারাফাত ও অন্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা ও নিজেদের মাধ্যমে একে অপরের যোগসাজশে প্রায় ৮৮৭ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের ওপর অনুসন্ধান চলমান। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিষয়ে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চৌধুরী নাফিজ সারাফত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহিদ এবং তার পুত্র চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান সারাফতের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে এবং তারা পলাতক রয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত স্থাবর সম্পত্তিগুলো মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সম্পৃক্ত অপরাধ তথা দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত/বৈধ আয় বহির্ভূতভাবে অর্জন করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর সঙ্গে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও (৩) ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা স্থাবর সম্পত্তিগুলো অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর, বন্ধক বা বেহাত করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্তে সূত্রে জানা যায়। বর্তমানে অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব স্থাবর সম্পত্তি অবিলম্বে ক্রোককরণ আবশ্যক।
আ. দৈ/ কাশেম