রাজধানীসহ সারা দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক হাজার ২২০টি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে হাজার কোটি টাকা লোপাটের নজির স্থাপন করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই সরকারের টানা ১৫ বছরের বঙ্গবন্ধুর নামে উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য ও ম্যুরালের মধ্যে খুলনা বিভাগে ২১টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২টি, ঢাকা বিভাগে ৪১টি, বরিশাল বিভাগে তিনটি, ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচটি, রংপুর বিভাগে চারটি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি এবং সিলেট বিভাগে একটি স্থাপন করা হয়। এর বাইরেও কয়েক হাজার ভাস্কর্য-ম্যুরাল নির্মাণ ও স্থাপন করা হয়েছে।
গত ১৫ বছরের বঙ্গবন্ধুর নামে অপ্রয়োজনীয় ভাস্কর্য নির্মাণ ও মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে মনগড়াভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে হাজার কোটি টাকার খরচ দেখিয়ে লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মুজিব ভাস্কর্য ও কিল্লায় গচ্চা রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার লোপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দুদকের মুখপাত্র মহাপরিচালক মো আক্তার হোসেন।
দুদকের মুখপাত্র বলেন, দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর অপ্রয়োজনীয় ভাস্কর্য কয়েক হাজার কোটি টাকা অপচয় ও তছরুপ করার অভিযোগটি কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অন্যদিকে দেশজুড়ে মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ, অতিরিক্ত বিল দেওয়া, গভীর নলকূপের দুই-তৃতীয়াংশ বিকল ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
দুদকের সূত্র মতে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বড় আকারের ভাস্কর্য ও ম্যুরালগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে চার হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে।
অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষ ও গবাদি পশু রক্ষায় সারা দেশে স্থাপন করা হয় আশ্রয়কেন্দ্র। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে এসব ভবন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি ভবনের সামনের খোলা জায়গা থাকবে খেলাধুলার সুবিধা। সরকার এই প্রকল্পের নাম দিয়েছিল ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে দেশের ১৬ জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। মানহীন সামগ্রী দিয়ে নির্মিত এসব কিল্লা এরই মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় লোকালয় থেকে অনেক দূরে নির্মাণের কারণে পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে লাইট-ফ্যান কিংবা অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া হয়নি। এমনকি কিল্লা নদীতে ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সবমিলিয়ে পুরো প্রকল্পই প্রশ্নবিদ্ধ।
আ. দৈ. /কাশেম