বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার জ্ঞাতআয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই সঙ্গে তার স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে ৭২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৯ টাকার জ্ঞাতআয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন দুদক।
আজ বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হয় বলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি আরো জানান, মাসুদ বিশ্বাসের স্ত্রী কামরুন্নাহারের অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় সম্পদ বিবরণী তলব করেছে দুদক।
ডিজি মো. আক্তার হোসেন বলেন, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযুক্ত মাসুদ বিশ্বাসের নিজ নামে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার জ্ঞাতআয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ রয়েছে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়।
এছাড়া মাসুদ বিশ্বাসের স্ত্রী কামরুন নাহারের নিজ নামে ৭২ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯৯ টাকার জ্ঞাতআয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় পৃথক সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির অনুমোদন দেওয়া হয়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় এই দম্পতির নামে জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে, যাচাইকালে তা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে দুদক।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএফআইইউ প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাসুদ বিশ্বাস। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ‘অঢেল সম্পদ ও অর্থপাচারের’ অভিযোগ পাওয়ার পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কথা জানায় দুদক। কমিশনের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দলকে এ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।অভিযোগ তদন্তে সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে দলনেতা করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বিএফআইইউয়ের এই সাবেক প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগটি ঘুষের বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে সেটির শেষ টানা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন হিসেবে না পাঠিয়ে ‘সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ হিসেবে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অনিয়ম ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিমিদ্রী লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছিল, যা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মাসুদ। তানাকা গ্রুপ, এসএ গ্রুপ ও আনোয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, অর্থপাচার-সংক্রান্ত সুনিশ্চিত তথ্য থাকা সত্ত্বেও অভিযোগগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার মাধ্যমে নথিভুক্ত করতেন। অর্থপাচারেরও আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার, আবদুল কাদির মোল্লার থার্মেক্স গ্রুপ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে অর্থপাচার, ঘুষের বিনিময়ে জিনাত এন্টারপ্রাইজের বিদেশে অর্থপাচারের মামলা ধামাচাপা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আ. দৈ. /কাশেম