পুরনো বছরকে বিদায়, আর নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত কক্সবাজার। এবারে অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশী পর্যটকের সমাগম হওয়ার আশা করা হচ্ছে। একারণে হোটেল-মোটেল ও গেষ্টহাউস সহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তবে উম্মুক্ত স্থানে কোন ধরণের কনসার্টের আয়োজন না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা। ওইদিন কক্সবাজার ভ্রমনে আসা লাখো পর্যটকের নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ।
প্রতিবছর থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকারণ্য হয়ে উঠে। বছরের শেষ সূর্যাস্থ দেখতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয় মিলিয়ে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়। এবারও তেমনটি প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন- থার্টিফার্স্টে উন্মুক্ত কোনো আয়োজন নেই। তারপরও কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে কক্সবাজারে। এ কারণে, তারকামানের হোটেল গুলো সহ আরও কয়েকটি হোটেল ইনহাউজ গেস্টদের জন্য আয়োজন করছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
কক্সবাজারের তারকামানের হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের গেস্ট রিলেশন অফিসার সোমাইয়া আকতার রাবু কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আমাদের বিশাল আয়োজন রয়েছে। হোটেলকে নতুন করে সাঁজানোর পাশাপাশি হোটেল গেস্টদের জন্য রয়েছে নানা সুবিধা। রয়েছে শীতকালিন পিঠা উৎসব। প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় হোটেল ইনডোরে নেয়া হয়েছে কনসার্ট। উক্ত কনসার্টে নাম করা শিল্পীরা অংশ নিবেন। এতে শুধুমাত্র আমাদের হোটেলের গেস্টরা অংশ নিতে পারবেন। আশা করা হচ্ছে, এবারের থার্টিফার্স্ট নাইট ঝমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে স্বাগত জানানো হবে ২০২৫ সালকে।
কক্সবাজার বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো: আবদুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম হবে। এর আগে থেকে শীতকালীন ছুটি উপলক্ষ্যে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। সমানতালে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন সমুদ্র সৈকত, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধপল্লী, চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, মহেশখালীর আদিনাথসহ পুরো কক্সবাজারের পর্যটন স্পটে। আর সরকারের নিয়ম মেনে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন দুহাজার পর্যটক। বিগত সময়ে অনেক ভ্রমণপিপাসু সেন্টমার্টিনে অবস্থান করে নতুন বছরকে বরণ করতো।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি মো. রেজাউল করিম কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, এবারো থার্টিফার্স্টে উন্মুক্ত কোনো আয়োজন নেই। তবে, তারকা হোটেল গুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনহাউজ গেস্টদের জন্য আয়োজন করছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। তবে, উম্মুক্ত স্থানে কনসার্টের আয়োজন করতে পর্যটন শিল্প আরো সমৃদ্ধ হতো’।
কক্সবাজার কলাতলী-মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৌখিম খান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘প্রতি বছর থার্টিফাস্ট নাইটের সময় বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয়। এবারও কোন ব্যতিক্রম হবে না। এজন্য আমরা বাড়তি প্রস্ততি নিয়েছি। প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের কিভাবে সেবা দেয়া যায়, সেজন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করেছি। আশা করা হচ্ছে কক্সবাজারে আসা পর্যটকরা তাদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন’।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ.ন.ম হেলাল উদ্দিন কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘উম্মুক্ত স্থানে আয়োজন না থাকতে কক্সবাজার তেমন জমে না। ২০১৭ সালে একসাথে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা আগমন ঘটে। পূর্ব থেকে অবস্থান করা আরও তিন লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে ৩৩টি ক্যাম্পে এখন রোহিঙ্গার অবস্থান প্রায় ১২ লাখ। নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ২০১৭ সাল থেকে থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপনে সৈকতে উন্মুক্ত বা বাউন্ডারি ভুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ হয়। আর ২০১৯ সালে করোনা মহামারীর পর পুরো পর্যটন নগরীই বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে থার্টিফার্স্ট নাইটের সেই জমজমাট আয়োজন আর হচ্ছে না কক্সবাজারে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. তানভীর হোসেন কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘থার্টিফার্স্টে দিনে উম্মুক্ত স্থানে কোন ধরনের আয়োজন নিষিদ্ধ রয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের থার্টিফাস্ট সংক্রান্ত মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে, পর্যটকরা চাইলে নিজেদের মতো নতুন বছর উদযাপনে মাঝরাত পর্যন্ত বীচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শহরের অভ্যন্তরে যানজট কমাতেও।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আসাদুজ্জামান কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘থার্টিফাস্ট নাইটকে ঘিরে এবারে ভিন্নভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। সাদা পোষাকের পাশাপাশি সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে ৫টি মোবাইল টিম। শুধু নিরাপত্তা নয়, ভ্রমনে আসা পর্যটকদের সমস্যা-সমাধানের জন্য রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ টিম।
আ. দৈ. /কাশেম/ বিজন