আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ২১ ডিসেম্বর তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হামলায় পাকিস্তানের ১৬ সেনা নিহত হয়েছে। এর জবাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনী আফগানিস্তানের পাকতিয়া প্রদেশে বোমা হামলা চালায়। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের দাবি, এই হামলায় নারী ও শিশুসহ ৪৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন।
এই ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তালেবান সরকার পাকিস্তানের ওপর পাল্টা হামলার হুমকি দিয়ে সীমান্ত সংঘাতের জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে।
সীমান্ত সংঘাতের পটভূমি
পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, টিটিপি আফগানিস্তানের সীমান্তে নিরাপদ ঘাঁটি গড়ে তুলে পাকিস্তানের ভেতরে ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে। অন্যদিকে, তালেবান সরকার পাকিস্তানের হামলায় বেসামরিক জনগণের ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ তুলেছে।
টিটিপির সাম্প্রতিক হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বোমা হামলা উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং ডুরান লাইন ঘিরে সংকট আরও তীব্রতর হয়েছে।
ঐতিহাসিক জটিল সম্পর্ক
১৯৯৬ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার সময় পাকিস্তান তাদের অন্যতম সমর্থক ছিল। কিন্তু ৯/১১-পরবর্তী সময়ে তালেবান নেতাদের পাকিস্তানে আশ্রয়ের সুযোগ দিয়ে তারা টিটিপির উত্থান ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে টিটিপি পাকিস্তানে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান পুনরুত্থানের পর পাকিস্তান আশা করেছিল, তালেবান টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করবে। তবে বাস্তবে তালেবান তাদের এই প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিকোণ
পাকিস্তানের সাবেক আফগান রাষ্ট্রদূত আসিফ দুররানি বলেন, 'তালেবানকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা টিটিপিকে সমর্থন করবে নাকি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করবে।' বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তালেবান যদি টিটিপির কার্যক্রম বন্ধে উদ্যোগ না নেয়, তবে সীমান্ত সংঘাত ও সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় হুমকি
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের চলমান সংঘাত পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। আন্তঃসীমান্ত হামলা, দীর্ঘদিনের ভূরাজনৈতিক বিরোধ, এবং উভয় দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ভবিষ্যতে আরও বড় সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি করছে।
দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার অভাব এই সংকটকে সমাধানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি তারা পারস্পরিক সহযোগিতায় কাজ না করে, তবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আরও হুমকির মুখে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আ. দৈ./সাধ