সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫,
২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
জাতীয়
৩১ ডিসেম্বর আসছে
‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’, কী আছে তাতে
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Sunday, 29 December, 2024, 1:37 PM  (ভিজিট : 247)

'থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর, নাও অর নেভার'। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎই ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এমন পোস্ট দেন। একই ফেসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছেন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও।

সেই পোস্টে তিনি লিখেন, 'প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন'। এর ঠিক কিছু আগেই আরেক পোস্টে তিনি লিখেন- 'কমরেডস, নাও অর নেভার' অর্থাৎ এখন না হলে কখনোই না।

এরপরই সবার মাঝে প্রশ্ন উঠেছে ৩১ ডিসেম্বর আসলে কী হচ্ছে?

এই প্রশ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ বাকি ছিল। যেটা ২০২৪ এর মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ করা হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণা দিবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।"

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এমন একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করা হচ্ছে যার মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের যে চেতনা সেটিকে বাস্তবায়ন করার কথাই ভাবা হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, "জুলাইয়ের অভ্যুত্থান একটা ব্যতিক্রম ও ঐতিহাসিক ঘোষণা। আমাদের এই ঘোষণাপত্রে ব্যতিক্রম বেশ কিছু বিষয় থাকবে।"

এরই মধ্যে এই ঘোষণাপত্র প্রস্তুতের কাজ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব পক্ষের সাথে আলোচনাও করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

কেন হঠাৎই তড়িঘড়ি করে এই ঘোষণাপত্রের প্রয়োজন পড়লো সেটি নিয়ে কথা হয় জুলাই আন্দোলনের নেতাদের সাথে। তারা জানাচ্ছেন, গত পাঁচই অগাস্টের পর হঠাৎই একটা সরকার গঠন হয়। তখন যদি বৈপ্লবিক সরকার গঠন করা হতো তাহলে সরকার, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় নানা সংকট তৈরি হতো না।

যে কারণে এই 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' বছরের শেষদিন করা হলেও তা কার্যকর ধরা হবে গত পাঁচই অগাস্ট থেকে।

এত আলোচনার কারণ কী?
শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে লিখেন, "৩১ ডিসেম্বর! শহীদ মিনার, বিকাল ৩টা। এখনই সময়, বাংলাদেশের জন্য।"

প্রায় একই সময় পরপর দুটি পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সেখানে তিনি লিখেন, "কমরেডস, থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর! নাও অর নেভার।" এরপর আরেকটি স্ট্যাটাসে আব্দুল্লাহ লিখেন, "প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন", থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর, শহীদ মিনার। বিকাল তিনটা।"

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও শনিবার রাতে পোস্ট দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর বিকেল তিনটায় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।

কী থাকবে সেই ঘোষণাপত্রে এমন প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, "এই ঘোষণাপত্রে বেশ কিছু বিষয় থাকবে যেটার মূল বিষয় থাকবে জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট। আমরা এখন ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করছি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।"

স্বাভাবিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকের মধ্যে নানা আলোচনা তৈরি হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ওইসব পোস্টের নিচে কেউ কেউ জানতে চান, "ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসবে সেদিন?"

তবে এসব প্রশ্ন নাকচ করে দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, "ওই দিন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র অংশগ্রহণের দিক থেকে এবং কার্যক্রমের দিক থেকে বাংলাদেশের ইতিহাসের ব্যতিক্রম একটি ঘটনা হবে। যে কারণে এটা নিয়ে সবার মাঝে আগ্রহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।"

কী থাকছে ছাত্রদের ঘোষণাপত্রে?
সন্ধ্যায় ফেসবুকে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে নানা আলোচনা দেখা যায় যায়। সরকারে থাকা ছাত্র উপদেষ্টা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ অনেকেই কথা বলেছেন। সেখানে ছাত্ররা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এক সংগঠক জানিয়েছেন, গত পনেরো বছরে কী কী দমন পীড়নের কারণে শিক্ষার্থীদের অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সেটি থাকবে ঘোষণাপত্রের প্রথমেই।"

"বিগত বছরগুলোতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, ভোটাধিকার হরণ, গুম ক্রসফায়ারের কারণে যে সংকট হয়েছে তার সাপেক্ষে এই অভ্যুত্থান করতে হয়েছে," বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই নেতা।

সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, "আমরা যে স্পিরিট নিয়ে এই আন্দোলন করেছিলাম সেটা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে এই ঘোষণাপত্রে। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে নানা সুপারিশমালাও থাকবে সেখানে।"

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, "অভ্যুত্থান পরবর্তী কেমন রাষ্ট্র শিক্ষার্থী ও দেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে সেটির বিষয় উল্লেখ থাকবে এই ঘোষণাপত্রে।"

এছাড়াও মৌলিক অধিকার ও নাগরিক অধিকার রক্ষা করবে এমন একটা রাষ্ট্রের ঘোষণা কিংবা রূপকল্প উপস্থাপন করা হবে এই ঘোষণাপত্রে।

এই ঘোষণাপত্র তৈরির সাথে জড়িত এক সংগঠক বলেন, "এই ঘোষণাপত্র রেট্রোস্পেক্টিভ কায়দায় ৫ অগাস্ট থেকে কার্যকর হবে।"

হঠাৎ কেন এই ঘোষণা?
গণঅভ্যুত্থানের গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ধরনের অসন্তোষ দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কর্মকর্তারাও একটি সংস্কার প্রস্তাবকে ঘিরে আন্দোলনে নেমেছেন।

এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় যখন রদবদলের চেষ্টা করা হয়েছে তখনও এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ কয়েকজন সংগঠক বলেন, পাঁচই আগস্ট পরবর্তী সরকার বিপ্লবী সরকার না হওয়ায় অনেক সিদ্ধান্তই তারা বিপ্লবী কায়দায় নিতে পারেনি। যে কারণে এখনো প্রশাসন ও সরকারে নানা সংকট দেখা যাচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, "এই সরকার না বিপ্লবী, না সাংবিধানিক সরকার। সে সময় যদি একটা বিপ্লবী সরকার গঠিত হতো তাহলে এই তারা অনেক ধরনের সিদ্ধান্তই নিতে পারতো।"

তবে এই ঘোষণা হঠাৎ কেন এখন ঘোষণা হচ্ছে এমন প্রশ্নে সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, "জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের কিছু অসমাপ্ত কাজ আছে সেটা সমাপ্ত করার কাজটি আমরা এই বছরের মধ্যেই করতে চাই।"

প্রায় একই রকম বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য আরিফ সোহেলও। তিনি বলেন, "এটি অনেক আগেই করা উচিত ছিল। কিন্তু এই ২৪ আর জুলাই আর কখনো ফিরে আসবে না। তাই একটু তাড়াহুড়ো করে হলেও বছরের শেষদিন জুলাই ঘোষণাপত্র দেবো।"

এই ঘোষণা চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শ্রেণি প্রেশার অংশীজনদের সাথেও এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা

আ. দৈ/ আফরোজা 



আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সরকারি চাকুরিজীবীদের কাজে ফাঁকি দেয়ার সযোগ নেই: দুদক চেয়ারম্যান
জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের অনুমোদন বাতিলের আল্টিমেটাম
সেই আনিসার পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই
হারুন-বিপ্লবসহ পলাতক ৪০ পুলিশের পদক প্রত্যাহার
‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে বললেন শাওন
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আটলা গ্রামের তরুণ যুবকদের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
পানির দাবিতে পল্লবীতে কালশী রাস্তা অবরোধ বিহারী ক্যাম্পবাসীর
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কমিটি, আহ্বায়ক- কিবরিয়া, সদস্য সচিব- ইমরান
অর্থপাচার মামলায় ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন জি কে শামীম
আবাসিক হোটেলে প্রেমিকের সঙ্গে রিয়া মনি, ভিডিও ফাঁস করলেন হিরো আলম
জাতীয়- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝