দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য পদত্যাগকারী প্রভাবশালী কমিশনার ও সাবেক জেলা জজ মো. জহুরুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে জহুরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক চিঠিতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সূত্র মতে,দুদকের প্রভাব খাটিয়ে তিনি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ৫ কাঠার দুটি প্লট একত্রে ১০ কাঠায় রূপান্তর করেন। অথচ বিদ্যমান আইনে তার বা স্ত্রীর নামে রাজউকের আওতায় একটির বেশি প্লট পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান বাজারমূল্যে জহুরুল হকের প্লটের মূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।
গণমাধ্যমকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। দুদকের ইতিহাসে সাবেক কমিশনার পদ মর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে আজ পর্যন্ত অনুসন্ধানের মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে এবারই প্রথম দুদকের সাবেক প্রভাবশালী কোনো কমিশনারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অবৈধ সম্পদ ও দুর্নীতির অভিযোগ দুদক থেকে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা আরো জানান, এর আগে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পাসপোর্ট আদেশ ১৯৭৩ এর ৭ (২) সি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জহুরুল হকের পাসপোর্ট বাতিলপূর্বক তিনি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্যু হওয়া ওই চিঠি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) বাংলাদেশ পুলিশ দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।
২০২১ সালের ১০ মার্চ কমিশনার হিসাবে মো. জহুরুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনে যোগদান করেন। গত ৩০ অক্টোবর পদত্যাগ করেন। ওইদিন দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার আছিয়া খাতুনও পদত্যাগ করেন।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত সাবেক কমিশনার মো. জহুরুল হকের বিরুদ্ধে প্লট ও আর্থিক অনিয়মসহ বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দুর্নীতি অনুসন্ধানের অনুমোদন দিয়েছে দুদক। চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত নথি অনুমোদনের পর অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
আরো অভিযোগ রয়েছে,জহুরুল হক জেলা জজ হিসেবে কর্মরত থাকাকালে বিডিআর বিদ্রোহ মামলার বিচারকাজে জড়িত ছিলেন। এ সময় তিনি বেশ কয়েকটি ফরমায়েশি রায় দেন। মূলত বিডিআর বিদ্রোহ মামলা অনুসন্ধানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে জহুরুলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিডিআর মামলার বিচারকাজের সূত্র ধরে জহুরুল হক হাসিনা সরকারের সুনজরে পড়েন। পরে অবসরে গেলেও তাকে পুরস্কার হিসেবে দুদকের কমিশনার পদে বসানো হয়। দুদকে বসে হাসিনার বিভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। বিরোধী বিভিন্ন রাজনীতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানিমূলক দুর্নীতি অনুসন্ধান ও মামলা দায়েরে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
দুদক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জহুরুল নিজেকে সৎ দাবি করে বিভিন্ন সময় জ্বালাময়ী বক্তব্য দিলেও হাসিনা সরকার পতনের পর পরই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। এ সময় আড়ালে থাকা তার প্লট কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। এতে দেখা যায়, রাজউক নতুন শহর (পূর্বাচল) প্রকল্পে জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি নিজের এবং স্ত্রী মাসুমা বেগমের নামে একাধিক বহু মূল্যবান প্লট ভাগিয়ে নেন।
আ. দৈ. /কাশেম