গাজার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে গত কয়েক দিনে তীব্র ঠাণ্ডায় তিন ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলের অবরোধে খাদ্য, পানি ও শীতকালীন সরঞ্জামের অভাবে এ করুণ ঘটনা ঘটে। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পরিচালক আহমেদ আল-ফাররা জানিয়েছেন, বুধবার তিন সপ্তাহ বয়সী সিলা মাহমুদ আল-ফাসিহ প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মারা গেছে। এছাড়া, গত ৪৮ ঘণ্টায় শীতজনিত কারণে তিন দিন ও এক মাস বয়সী আরও দুটি শিশুকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।
তীব্র শীতে শিশুমৃত্যুর পেছনের কারণ
আহমেদ আল-ফাররা আলজাজিরাকে বলেন, সিলা সুস্থ অবস্থায় জন্মেছিল। তবে তাঁবুর প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়।
সিলার বাবা মাহমুদ আল-ফাসিহ জানান, পরিবারটি আল-মাওয়াসি শিবিরে একটি তাঁবুতে কঠিন পরিস্থিতিতে বাস করছিল। তাঁবুটি বাতাস থেকে সুরক্ষিত ছিল না, এবং রাতের ঠাণ্ডা ও বৃষ্টিতে শিশুটি রাতে তিনবার কান্না করে জেগে উঠেছিল। সকালে মা-বাবা তাকে নিথর অবস্থায় খুঁজে পান। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেখা যায়, শিশুটি ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে।
গাজার মানবিক সংকট
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. মুনির আল-বুরশ জানিয়েছেন, এই মৃত্যুগুলো ইসরায়েলের 'অস্থায়ী নিরাপদ মানবিক এলাকা' হিসেবে চিহ্নিত স্থানে ঘটেছে।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। গাজার ৯০ শতাংশ বাসিন্দা একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শীতের মধ্যে শত শত মানুষ উপকূলীয় তাঁবুতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।
ত্রাণ সংস্থাগুলো খাবার ও সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। কম্বল, গরম কাপড় ও জ্বালানির তীব্র সংকট পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের দুর্দশা এবং শরণার্থীদের ওপর এর প্রভাবের একটি নির্মম উদাহরণ উঠে এসেছে।
আ. দৈ./ সাধ