উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর কলেজের অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে ৩১ জন সহকারি অধ্যাপক ও প্রভাষকগণ লিখিত অভিযোগ দাখিল করায় প্রধান অভিযোগকারী বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম শেখকে বেধরক মারপিট করা হয়েছে। তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা কলেজে অবস্থান নিলে তদন্ত কর্মকর্তার সামনে অভিযোগকারীদের উপস্থিত না হওয়ার জন্য অধ্যক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী অভিযোগকারীকে বেধরক মারপিট করার ঘটনা ঘটেছে।
সন্ত্রাসী বাহিনী ৩১জন শিক্ষককে তদন্ত কর্মকর্তার সামনে উপস্থিত না হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানে হাঙ্গামা-ভাংচুর চালানো হয়। এতে অভিযোগকারী ৩১জন শিক্ষক দ্রুত কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। অপরদিকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি দেখে তদন্ত কর্মকর্তা সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এনিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোনা। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জ সলঙ্গা থানার নলকা ইউনিয়নে ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল আলম সেখ ও কলেজের ৩১ জন সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকগণ ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদ আলী শেখ এর বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতির বিরুদ্ধে গত ২৭ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগের আলোকে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ’র সাহেদ আলী শেখ এর বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি তদন্ত করার জন্য রায়গঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো: হাফিজুর রহমানকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশ প্রাপ্ত হয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তদন্ত করার জন্য চিঠির মাধ্যমে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখে তদন্তের/শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। শুনানী (০৪ সেপ্টেম্বর ) কলেজে সকাল ১১টায় কলেজে প্রাঙ্গনে শুরু হয়।
শুনানী শুরু হওয়ার সাথে সাথে মূল অভিযোগকারী বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম শেখ তদন্ত বোর্ডে যাওয়ার সময় রুমের দরজার সামনে অধ্যক্ষ সাহেদ আলী শেখ এর সন্ত্রাসী বাহিনী নলকা ইউনিয়নের হোড়গাঁতী গ্রামের মৃত ওসমান সরকার পুত্র আ: লতিফ সরকার (৫০), আলামিন (৪৫), লতিফ সরকার এর পুত্র রেজাউয়ানুল ইসলাম ফয়সাল, তুলা কালাম সরকার এর পুত্র আলমগীর (৩৪), কুমাজপুর গ্রামের মাসুদ সহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জন্য সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অভিযোগকারীদের উপরে হামলা করে। হামলায় প্রধান অভিযোগকারী নুরুল ইসলাম শেখকে বেধরক মারপিট করা হয়।।
স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় মূল অভিযোগকারী নুরুল ইসলাম শেখকে সিরাজগঞ্জ ২৫০ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা রায়গঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো: হাফিজুর রহমানকে মোবাইল ফোনে বারবার ফোন করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, অভিযোগ আলোকে রায়গঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তাকে তদন্ত করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তদন্তের পূর্বেই অভিযোগকারীদের মারপিট করা হয়েছে। এবিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ফুলজোড় ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদ আলী শেখ এর বিরুদ্ধে ছাত্র ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত, বিদেশ অবস্থানরত অধ্যাপক ছালমা খাতুনের বেতন ভাতা উত্তোলন, অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে আয় ব্যয় হিসাব লিপিবদ্ধ নেই, কোন অডিট নেই।
কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অনিয়ম, কলেজের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা আত্মসাত, ২০২২ সালে নিয়োগের নামে ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাত, কলেজের গভর্নিং বডির গঠনে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা সহ ১২টি পয়েন্ট উল্লেখ করে রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন কলেজের ৩১জন সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও হোড়গাঁতী গ্রামের কৃতি সন্তান, বিএল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো: নুরুল আলম শেখ।
আ. দৈ. / কাশেম/ আশরাফ