আন্তর্বতীকালীন সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন,দুর্নীতির বিরুদ্ধে কখনো আপোষ করবেন না। দুর্নীতিবাজাদের কাছে মাথানত করবেন না দুদক। ছাত্র জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে জনগণের প্রত্যাশা পুরনে দুর্নীতিবাজদের ছাড় দেওয়া হবে না।তিনি বলেন, দুদকের ভেতরের কোন ধরণের দুর্নীতিবাজ থাকলে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় দুদকের অতীত ও বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন সাংবাদিকরা। অনুষ্ঠানে আলোচকগণ জানান গত ১৫ বছরে দেশে দুর্নীতির বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দুই কমিশনারকে শক্তহাতে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, কমিশনার (তদন্ত)মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী,কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ,দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন, এনডিসি, মহাপরিচালক মীর রুহুল আমিন, মো. মোকাম্মেল হক, মো. আক্তার হোসেন, মো. কাহারিয়ারসহ পদস্থ কর্মকর্তা এবং রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) সভাপতি জেমসন মাহবুব, সাধারণ সম্পাদক শাফি উদ্দিন আহমদসহ সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, টানা ১৫ বছর দেশে রাজনৈতিক সরকারের আমলে কি পরিমান দুর্নীতি, লোপাট, অর্থপাচার এবং জনগণের ওপর জুলুম হয়েছে, তার তথ্য সাংবাদিকরাই প্রকাশ করছেন। তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রীরা পালানোর সাথে সাথে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব পর্যন্ত পালিয়েছেন। এই ঘটনায় স্পষ্ট বুঝা য়ায়, তারা দেশে কি পরিমান অনিয়ম,দুর্নীতি এবং জনগণের ওপর জুলুম করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গণমাধ্যমের সামনে নিজের সম্পদ বিবরণী তুলে ধরেন। তিনি নিজের আয়-ব্যয় ও সম্পদের ফিরিস্তিতে উল্লেখ করে বলেন আনুষ্ঠানিকভাবে তার সম্পদ বিবরণী দুদক সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দিয়েছেন। অপর দুই কমিশনারও তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দিয়ে দেবেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, রাজধানীর বসিলায় তার ১৫০০ স্কয়ার ফিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। সেখানে আরও ৭০০ স্কয়ার ফিট নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে তার একটি খালি জায়গা আছে পাঁচ কাঠা। বিসিএস প্রশাসন কমিটির সদস্য ছিলেন। সেখানে আটজন সদস্যের জন্য ১০ কাঠা জমি আছে। তার ভাগে ১ দশমিক ২৫ কাঠা পড়বে। ২০০৭ সালে টাকা-পয়সা পেয়েছেন, কিন্তু এখন পযন্ত দখল পাইনি। বাসায় ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র আছে। চাকরি থেকে পাওয়া টাকায় মধ্যে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন। বর্তমানে একলাখ ৫ হাজার টাকা বেতনে চুক্তিভিত্তিক ৫ বছর মেয়াদে দুদকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ইনকাম ট্যাক্সেও নথিতে সব কিছু উল্লেখ করেছেন। তিনি এক সময় সাংবাদিকতা করেছেন, চাকরি জীবনে এবং অবসর গ্রহণের পরও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লিখে অর্থ উপার্জন করেছেন। এমন কি বই লিখেও বেশ আয় করেছেন বলে জানান।দুদক থেকে যে দিন বিদায় নেবেন সেদিন তার সম্পদের হিসেব প্রকাশ করবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন,৩০০ মিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি মদ্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
উল্লেখ্য, নিয়োগ পাওয়ার একদিন পরই গত ১১ ডিসেম্বর কর্মস্থলে যোগ দেন ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। ওইদিন ৭দিনের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করার কথা জানিয়ে ছিলেন তিনি। ওইদিনই দুদকের নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আ. দৈ./কাশেম