পাখিদের কিচিরমিচির শুনে অনেকের দিন শুরু হয় এবং দিনের শেষে এই সুরে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে এক ধরনের শান্তি। ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলা পাখিদের এই কিচিরমিচির শুধু সৌন্দর্যের প্রকাশ নয়, এর পেছনে রয়েছে নানা বৈজ্ঞানিক ও প্রাকৃতিক কারণ।
পাখিদের কিচিরমিচির তাদের দৈনন্দিন জীবনধারার একটা অংশ। এটা পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
পাখিরা সাধারণত ভোরে গান গেয়ে নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করে। এই গান অন্য পাখিদের সতর্ক করে দেয় যে, এই এলাকা দখল করা তাদের কাজ নয়। এটি মূলত পুরুষ পাখিদের একটি প্রবৃত্তি। এটা তাদের নিজেদের এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
প্রজনন মৌসুমে পাখিদের গান আরও বেশি সুমধুর ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। ভোর ও সন্ধ্যায় পুরুষ পাখিরা গান গেয়ে মেয়ে পাখিদের আকর্ষণ করে। এই গান শুধু সঙ্গী আহ্বানের মাধ্যম নয়, এটি তাদের শারীরিক সক্ষমতা ও স্বাস্থ্যও প্রকাশ করে।
পাখিরা দলে বসবাস করে, এবং তাদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য কিচিরমিচির একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
এটি তাদের দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া খাবারের অবস্থান, শত্রুর উপস্থিতি বা অন্য কোনো বিপদের সতর্কতাও তারা এই সুরের মাধ্যমে জানায়।
পাখিরা সূর্যের ওঠা-নামার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের কাজকর্ম শুরু ও শেষ করে। ভোরের আলো যখন ধীরে ধীরে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে, তখন পাখিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং তাদের কণ্ঠস্বর দিয়ে দিনের শুরু ঘোষণা করে। সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার সময় তারা নিজেদের নীড়ে ফেরার আগে কিচিরমিচির করে দিনের সমাপ্তি বোঝায়।
ভোর ও সন্ধ্যা হলো এমন সময় যখন পরিবেশ শান্ত থাকে, এবং শব্দ দূর পর্যন্ত পৌঁছায়। এই সময়ে পাখিদের কণ্ঠ অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তারা নিজেদের দলের সদস্যদের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে বা শিকারীদের আগমনের খবর জানাতে এই কিচিরমিচির ব্যবহার করে।
পাখিরা ভোর ও সন্ধ্যার সময় কিচিরমিচির করার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী মনে করে। এর কয়েকটি কারণ হলো। ভোর ও সন্ধ্যায় পরিবেশ অনেকটা নীরব থাকে। এই সময়ে পাখিদের কণ্ঠ সহজে ছড়িয়ে পড়ে।
ভোর ও সন্ধ্যায় বায়ু সাধারণত শান্ত থাকে, যা শব্দের পরিসর বাড়িয়ে দেয়। দিনের বেলা শিকারি প্রাণীদের আনাগোনা বেশি থাকে। তুলনায় ভোর ও সন্ধ্যায় পাখিদের জন্য পরিবেশ তুলনামূলক নিরাপদ।
আরেকটা গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে। সাধারণত পাখিরা একটা নির্দিষ্ট এলাকায় বাস করে। বিশেষ করে বড় গাছ কিংবা বাঁশবাগান কিংবা অন্য কোনো ধরনের বাগান। সারাদিন পাখিরা ঘুরে ঘুরে খাবার খোঁজে, সন্ধ্যা হলে পাখিরা একত্রিত হয়।
একটা বড় গাছ বা বাগানে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার পাখি জড়ো হয় সন্ধ্যায়। একটা পাখির ডাক যতটা শব্দ তৈরি করতে পারে, কয়ে শ বা কয়েক হাজার বছর পাখির ডাক বেশ তার চেয়ে অনে জোরালো আওয়াজ তৈরি করতে পারে। তাই সন্ধ্যাবেলায় কিচিরমিচির আমাদের এতটা মনোযোগ আকর্ষণ করে।
রাত নেমে এলে পাখিরা ঘুমায়। সকাল হলেই সবগুলো পাখি প্রায় একই সময় জেগে ওঠে এবং কিচিরমিচির করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা তাদের আশ্রয়স্থল ছেড়ে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।
তাই ভোর ও সন্ধ্যায় পাখিদের কিচিরমিচির এত বেশি শোনা যায়।
সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস
আ.দৈ/এআর