রপ্তানীমূখী টেক্সটাইল সেক্টরের বিদ্যমান সমস্যা/চ্যালেঞ্জসমূহ উত্তোরণে সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আহসান এইচ মনসুরের সাথে বৈঠক করেছে বিটিএমএ’র সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
গতকাল মঙ্গলবার বিটিএমএ প্রতিনিধিদল গর্ভনের সাথে বৈঠক করেছেন। এতে বিটিএমএ’র নেতারা গভর্ণরকে বলেন, সদস্য ভ্ক্তূ মিলগুলি কর্তৃক ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি’র মাধ্যমে সরবরাহকৃত ইয়ার্ণ ও ফেব্রিকের বিপরীতে তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের সংশ্লিষ্ট এলসি প্রদানকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ নির্দিষ্ট সময় বিল পরিশোধ না করার ফলে মিলগুলিতে তারল্য সংকট রয়েছে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, বিটিএমএ’র সদস্যভৃক্ত মিলসমূহ কর্তৃক ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি’র বিপরীতে চাহিদামতো পণ্য সরবরাহ করার পর পার্টি গ্রহণযোগ্যতা থাকার পরেও কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক নির্দিষ্ট সময় বিল প্রদান করছে না। যা আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মিলগুলি তাদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা বিশেষভাবে ঋণ পরিশোধে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বিলের অর্থ আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ কর্তৃক দ্রুত পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করার জন্য অনুরোধ রইলো।
ব্যবসায়ী নেতারা আরো বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ যাতে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি’র বিপরীতে বিটিএমএ’র সদস্যভূক্ত মিলের সরবরাহকৃত পণ্যের বিলসমূহ নির্দিষ্ট সময় হওয়ার পরে যথা সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে উক্ত বিল পরিশোধ করে তা নিশ্চিত করা ও সরবরাহকৃত ইয়ার্ণ ও ফেব্রিকের পার্টি দ্রুততার সাথে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিএমএ এবং সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের সাথে দ্রুত একটি কমিটি গঠন করে ত্রিপক্ষীয় সভার আয়োজন করা।
বিটিএমএ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, ২৫০% গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের বেতন ৭০% বৃদ্ধি, সাম্প্রতিক কালে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ, প্রয়োজনীয় গ্যাস এবং বিদ্যুত সরবরাহের অভাবে মিলগুলি তাদের সম্পুর্ন উৎপাদন ক্ষমতা (৫০-৬০% অব্যবহৃত) ব্যবহার করতে না পারা সহ অন্যান্য সমস্যার কারণে রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল সেক্টরের ইন্ডাস্ট্রিসমূহ ব্যাংকের গৃহীত ঋণের কিস্তি বিআরপিডি সার্কুলার নং ৯, তারিখঃ ৮ এপ্রিল ২০২৪ অনুযায়ী পরিশোধে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি অপারগ হওয়ায় তাদের কারো কারো ঙাবৎফঁব হয়েছে/হচ্ছে ।
এই মুহূর্তে রপ্তানিমুখী প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টরের ইন্ডাষ্ট্রি সমূহের পক্ষে মেয়াদী ঋণের কিস্তি বর্নিত সার্কুলার অনুযায়ী পরিশোধ অসম্ভব হয়ে পড়েছে । বিআরপিডি সার্কুলার নং ৯, তারিখঃ ৮ এপ্রিল ২০২৪ অনুযায়ী একটি মেয়াদী ঋণ/বিনিয়োগের কোন কিস্তি/কিস্তিসমূহ নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে, বর্নিত ঋণ নির্ধারিত তারিখের পরবর্তী তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ওভারডিউ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ৩১ মার্চ ২০২৫ তারিখ হতে সকল ঋণ তাৎক্ষনিকভাবে পরিশোধ না করলে তা ওভারডিউ হবে ।
গ্যাস এবং বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত উল্লিখিত বিআরপিডি সার্কুলার নং ৯ বাতিল করে অনতিবিলম্বে বিআরপিডি সার্কুলার নং ৩, তারিখঃ ২১ এপ্রিল ২০১৯ অনুযায়ী সকল ঋণ পরিশোধের জন্য ৬ মাস সময় নির্ধারনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন । কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারনে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমান উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় স্থানীয় টেক্সটাইল সেক্টরসহ উৎপাদনমূখী শিল্পসমুহ কাঁচামাল আমদানিকালে বিনিময় হারজনিত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে । এতে উক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাসসহ ফোর্সড লোন সৃষ্টি হচ্ছে এবং চলতি মুলধনে ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং ৫০; তারিখঃ ২৭ নভেম্বর ২০২৪ জারী করে কয়েকটি খাতের আমদানি দায় পরিশোধকালে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত ক্ষতি দূরীকরণে নির্দেশনা প্রদান করেছে কিন্তু দুঃখজনকভাবে এতে টেক্সটাইল সেক্টরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি ।অথচ টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল সেক্টর দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। অন্যদিকে দেশের ১৭ কোটি মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরন করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে । এমতাবস্থায়, টেক্সটাইল সেক্টরের অবদানকে বিবেচনায় নিয়ে টেক্সটাইল সেক্টরের আমদানি দায় পরিশোধকালে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারজনিত ক্ষতি পূরনে বিটিএমএ’র সদস্যদের জরুরী ভিত্তিতে বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং ৫০; তারিখঃ ২৭ নভেম্বর ২০২৪ এর আওতাভুক্ত করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
ব্যাংকগুলি কর্তৃক প্রতি বছর ঋণ গৃহীতা এবং জামিনদাতার কাছ থেকে চার্জ ডকুমেন্ট সমূহে বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ এবং স্বাক্ষর গ্রহণ করা হচ্ছে এতে ব্যাংক এবং ঋণ গৃহীতা উভয়ের প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে ফলে কর্মঘন্টা হ্রাস পাচ্ছে । এতে দৈনন্দিন ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । ঋণের পরিমান বৃদ্ধি না পেলে ব্যাংকগুলি কর্তৃক ঋণ গৃহীতা এবং জামিনদাতার কাছ থেকে প্রতি বছর চার্জ ডকুমেন্ট সমূহে বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ এবং স্বাক্ষর গ্রহণ না করে প্রথমবার গৃহীত বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ এবং স্বাক্ষরকেই প্রতিবছরের জন্য গ্রহণ করা । অথবা প্রতি বছর যদি বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ এবং স্বাক্ষর নিতেই হয় তাহলে সকল ডকুমেন্টস বই আকারে প্রস্তুত করে উক্ত বইয়ের প্রথম এবং শেষ পাতায় ঋণ গৃহীতা এবং জামিনদাতার বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ এবং স্বাক্ষর নেয়ার বিধান চালু করা। বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের স্যালারী, ওয়েজ, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিটানো মিলগুলির পক্ষে সম্ভব নয় ।
এমতাবস্থায় দেশে ইন্টারেস্ট-অনলি লোন ব্যবস্থা শুরু করা যেতে পারে । যেখানে ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুধুমাত্র সুদ পরিশোধ করবেন এবং মূল ঋণের অর্থ (প্রিন্সিপাল) পরিশোধের জন্য সময় পাবেন । এই ব্যবস্থা যুক্তরাজ্যে অনেক জনপ্রিয়। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আগামী ২ বছরের জন্য চলমান সকল ঋণের ক্ষেত্রে বর্নিত ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ।
উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে বিদ্যমান পরিস্থিতি হতে উত্তরন তথা টেক্সটাইল খাতকে গতিশীল ও আমাদের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের চাকাকে সচলসহ টেক্সটাইল মিলগুলিতে আবারো গতিশীলতা আনয়নের জন্য উপরোক্ত প্রস্তাবগুলি বিবেচনা করতে অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
আ. দৈ./ সাধ/ রমজান