ইসরাইলের দৃষ্টি এখন পুরোপুরি গোলান মালভূমির দিকে। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর এবার ইসরাইলের নজর সিরিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল গোলান মালভূমির দিকে। সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো দেখে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের চাপের মুখে দেশ ছেড়ে পালানোর দিনই ইসরাইল গোলান মালভূমিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ নেয়। ওই দিনই ইসরাইলি বাহিনী নিরপেক্ষ অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং সেখানে সেনা মোতায়েন করে। এই অঞ্চলটি সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে ‘বাফার জোন’ হিসেবে পরিচিত, যেখানে কোনো পক্ষই সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার অনুমতি পায় না। তবে ইসরাইলি বাহিনী সেখানে প্রবেশ করে এটিকে "নতুন সীমান্ত পরিস্থিতি" হিসেবে বর্ণনা করে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গোলান মালভূমিতে ইহুদি বসতি দ্বিগুণ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, "সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের কারণে সীমান্তে নতুন এক ফ্রন্ট খুলেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের বসতি বাড়ানো ও সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা জরুরি।"
নেতানিয়াহু আরও বলেন, "আমরা গোলান মালভূমির দখল ধরে রাখব, সমৃদ্ধ করব এবং স্থিতিশীল রাখব।" তবে ইসরাইলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবুও ইসরাইল এই অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।
আন্তর্জাতিক আইন ও বসতি সম্প্রসারণ:
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মালভূমির বড় অংশ দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক আইনে এই দখল অবৈধ বলে গণ্য হলেও ইসরাইল বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। এই মালভূমি সিরিয়া ও ইসরাইল উভয়ের জন্যই কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে গোলান মালভূমিতে ইসরাইলের ৩০টির বেশি বসতি রয়েছে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার ইসরায়েলি বসবাস করেন। একই অঞ্চলে সিরীয় বংশোদ্ভূত প্রায় ২০ হাজার দ্রুজ আরবও বসবাস করেন। দখলদারিত্বের পরেও দ্রুজ আরবরা তাদের বসতি ছাড়েনি।
ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন যে আমরা সিরিয়ার সঙ্গে সংঘাত বাড়াতে চাই না। তাহলে কেন আমরা এর সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করছি? আমাদের এমনিতেই বহু সমস্যা রয়েছে, যা সমাধানের জন্য মনোযোগ দেওয়া উচিত।"
কেন গোলান মালভূমি গুরুত্বপূর্ণ?
গোলান মালভূমি শুধুমাত্র কৌশলগত অবস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এই অঞ্চলের পানিসম্পদও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইসরাইলের পানি সরবরাহের একটি প্রধান উৎস। এ ছাড়া এখান থেকে পুরো সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব, যা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সিরিয়া বরাবরই গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধারের দাবি করে আসছে। তবে দেশটির চলমান গৃহযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবে তাদের এ দাবি কার্যকর করার মতো পরিস্থিতি নেই। এখন, সিরিয়ার এই অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে ইসরাইল তার কর্তৃত্ব আরও জোরদার করতে চাইছে।
ইসরাইলের গোলান মালভূমি নিয়ে এই পদক্ষেপকে অনেকেই "আগ্রাসী পদক্ষেপ" বলে অভিহিত করছেন। ইসরাইলের সামরিক নিয়ন্ত্রণ, বসতি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সিরিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ইসরাইল তার কৌশলগত লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আ. দৈ./ সাধ