ভারতের লোকসভায় পেশ করা হয়েছে বহুল আলোচিত 'এক দেশ, এক ভোট' সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল।
আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল সংসদে এই বিলটি উপস্থাপন করেন। একইসঙ্গে আরও একটি বিল, 'কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আইন (সংশোধনী) বিল'ও পেশ করা হয়।
বিলটি উত্থাপন করার পরপরই বিরোধী দলগুলো তীব্র আপত্তি জানায়। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্যরা বিলটির তীব্র বিরোধিতা করেন। বিরোধীরা অভিযোগ করেন, 'এক দেশ, এক ভোট' পদ্ধতি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত হানবে এবং রাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসন হ্রাস করবে। তারা এটিকে গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই বিলটি জনগণের নিয়মিত ভোটদানের মৌলিক অধিকারকে হরণ করার চেষ্টা করছে। এটি এমন একটি অধিকার যা সরকারকে দায়বদ্ধ রাখতে এবং একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।" তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই বিল একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র।
কংগ্রেস এমপি কে সুরেশ বলেন, "এক দেশ, এক ভোট পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সরকার আমাদের মতামত চায়নি। আমরা এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করছি, কারণ এটি গণতন্ত্রের স্বার্থবিরোধী।" বিরোধীরা একযোগে দাবি করেন, বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন।
বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে 'এক দেশ, এক ভোট' পদ্ধতির পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তাদের মতে, এই পদ্ধতি চালু হলে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নির্বাচনের জন্য আলাদা ভোটের প্রয়োজন পড়বে না। একই দিনে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে নির্বাচন পরিচালনার খরচ কমে যাবে, পাশাপাশি বারবার আদর্শ আচরণবিধি জারি হওয়ার কারণে সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টিও এড়ানো যাবে।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল বলেন, "এই পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনের জন্য সরকারের বিশাল অর্থ ব্যয় কমে যাবে। ভোটের সময় যে উন্নয়নমূলক কাজ থেমে থাকে, তা আর হবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের বারবার ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করতে হবে না।" সরকারের দাবি, এই প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করবে, যা নির্বাচনের পরিচালনাগত সমস্যাগুলো কমিয়ে আনবে।
বিরোধীদের প্রধান অভিযোগ হলো, এই বিল রাজ্যগুলোর স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাদের মতে, রাজ্য সরকারের অধিকার ও ক্ষমতা খর্ব করার অপচেষ্টা হিসেবে এই বিল আনা হয়েছে। বিরোধীরা মনে করেন, এককেন্দ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হলে কেন্দ্রীয় সরকার অতিরিক্ত ক্ষমতা অর্জন করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।
বিলটি পেশ হওয়ার পর পার্লামেন্টে উত্তেজনা বেড়ে যায়। বিরোধীরা সংসদের মধ্যেই স্লোগান দেন এবং তীব্র প্রতিবাদ জানান। আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল বিলটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও বিরোধীরা এতে রাজি হননি। কংগ্রেসসহ বিরোধী দলগুলো এই বিল বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
বিজেপি নির্বাচনী ইশতেহারে 'এক দেশ, এক ভোট' পদ্ধতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি কার্যকর হলে দেশজুড়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিরোধীদের মতে, এই পদক্ষেপ ভারতের বহুত্ববাদী এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করবে।
সামনে এই বিল নিয়ে তুমুল বিতর্ক এবং আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন এবং ভোটাধিকার নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা ভারতের রাজনীতি ও সংবিধানিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
আ. দৈ./ সাধ