সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান বাতিল করেছে হাইকোর্ট। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সংবিধানের এই সংশোধনীতে ৫৪টি পরিবর্তন আনা হয়েছিল। কিন্তু এসব পরিবর্তনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দুটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। রায়ে চারটি মূল বিধান বাতিল করা হয়। তবে অন্যান্য বিধান সংশোধনের দায়িত্ব সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আদালত বলেছেন, পরবর্তী সংসদ জনগণের মতামত নিয়ে এসব বিধান সংশোধন, পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে পারবে।
বাতিল হওয়া চারটি প্রধান বিধান:
১. তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিলুপ্তি:
২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। আদালতের রায়ের ফলে এই পদ্ধতি পুনর্বহালের পথ খুলে গেল।
আদালত জানিয়েছে, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার যে প্রক্রিয়া ছিল, তা আইনগতভাবে যথাযথ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) শুনানি হবে।
২. ৭(ক) অনুচ্ছেদ বাতিল (রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত বিধান):
৭(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেউ যদি অসাংবিধানিক উপায়ে সংবিধান বাতিল, স্থগিত বা রহিত করার উদ্যোগ নেয়, তবে তা রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে গণ্য হতো।
এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, এমন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
আদালত রায়ে এই অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেয়।
৭(খ) অনুচ্ছেদ বাতিল (সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংশোধনের নিষেধাজ্ঞা):
৭(খ) অনুচ্ছেদে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো, প্রস্তাবনা, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশসহ নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোকে পরিবর্তন, সংশোধন বা প্রতিস্থাপন করা যাবে না বলে বলা হয়েছিল।
আদালত এই বিধান বাতিল করে বলেন, সংসদ চাইলে সংবিধানের এই অংশগুলো সংশোধন করতে পারবে।
৪৪(২) অনুচ্ছেদ বাতিল (মৌলিক অধিকার বলবৎকরণের ক্ষমতা হ্রাস):
৪৪(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে হাইকোর্টের ক্ষমতা সীমিত করে অন্যান্য আদালতকেও ক্ষমতা দেওয়ার বিধান ছিল।
আদালতের রায়ে এই বিধান বাতিল করা হয়েছে। এখন হাইকোর্টই মৌলিক অধিকার বলবৎ করার একমাত্র ক্ষমতাসম্পন্ন আদালত থাকবে।
গণভোটের বিধান পুনর্বহাল:
সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোট বাতিল করা হয়েছিল, যা আদালত আবারও পুনর্বহাল করেছে।
আদালতের মতে, সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য গণভোটের বিধান থাকা উচিত।
রায়ের প্রতিক্রিয়া:
এই রায়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর রক্ষাকবচ হিসেবে ৭(ক) ও ৭(খ) অনুচ্ছেদের যে বিধান ছিল, তা বাতিল হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের পথও প্রশস্ত হলো।"
আদালতের রায়ের ফলে সংসদ চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে পারবে। তাছাড়া সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরেছে এবং সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো সংশোধনের সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে।
আ. দৈ./ সাধ