পশ্চিমবঙ্গে বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর পশ্চিমবঙ্গে বাবরি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই বিজেপি পাল্টা ঘোষণা দেয় যে, তারা পশ্চিমবঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণ করবে। এই দুই পক্ষের ঘোষণা ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর জানান, বাবরি মসজিদ মুসলিমদের আবেগের প্রতীক। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, যা ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৯ সালে বাবরি মসজিদের জন্য ৫ একর জমি বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছিল। হুমায়ুনের মতে, এই জমিতে মসজিদ গড়ে উঠবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।
তিনি আরও বলেন, "মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ নির্মাণ নিয়ে কেউ কেউ বলছেন, এটি মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াবে। কিন্তু, এমন কিছু হবে না। এখানে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। মসজিদ নির্মাণে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনো জমি বা অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়নি।"
হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, "সীমান্ত পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্র সরকারের। আমাদের এলাকায় আমি কোনো ধরনের উত্তেজনার পরিস্থিতি দেখিনি।"
হুমায়ুন কবীরের বাবরি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণার পর বিজেপি পাল্টা ঘোষণা দেয় যে, পশ্চিমবঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণ করা হবে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুক্রবার বিজেপি এই ঘোষণা দেয়।
বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, "বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হলে তার জবাবে রাম মন্দির নির্মাণ করা উচিত—এমনটা হওয়া ঠিক নয়। তবে, বাবরি মসজিদও গড়া যেতে পারে, রাম মন্দিরও গড়া যেতে পারে।"
অগ্নিমিত্রা পাল আরও অভিযোগ করেন, "হুমায়ুন কবীর এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন হিন্দুদের গণহত্যা করা হবে এবং তাদের লাশ ভাগীরথীর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি।"
বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দির নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির এই পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা দাবি করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিচ্ছেন। তার অভিযোগ, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে বাংলায় আরেকটি 'বাংলাদেশ' তৈরি করতে চাইছেন।"
বিজেপি আরও জানায়, তারা অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে এবং বহরপুরে নতুন রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবে।
উত্তেজনার পেছনে তৃণমূল-বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তৃণমূল ও বিজেপি উভয়ই তাদের নিজ নিজ ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে এই ধর্মীয় ইস্যুগুলোকে সামনে আনছে। মুর্শিদাবাদের মতো এলাকায় সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজ্যজুড়ে এই ইস্যুতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আ. দৈ./ সাধ