শুরুর দুইদিন দর্শক খরা থাকলেও তৃতীয় দিন এসে বন্দর নগরীতে ভিন্ন চিত্র পেয়েছে বিজয়মেলা। শুক্রবার ( ১৩ ই ডিসেম্বর ) ছুটির দিনে কাজির দেউড়িস্থ সার্কিট হাউস সংলগ্ন পরিত্যক্ত শিশুপার্কের খোলা জায়গায় এই বিজয় মেলা বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায় হয়ে উঠেছিল জমজমাট।
সকাল থেকে বিজয়মেলার গেট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও জুমার নামাজের আগে দর্শনার্থীদের খুব একটি ভিড় ছিল না। কিন্তু বিকেল গড়াতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নানা বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুদের আগমনে মেলায় ক্রমশ বাড়তে থাকে ভিড়। সময় যতই গড়াতে থাকে মেলার একমাত্র গেট দিয়ে স্রোতের মতো প্রবেশ করতে থাকে মানুষ। এমনকি মেলার বাইরে সড়কেও জমে মানুষের ভিড়। মেলামুখী দর্শকদের ভিড়ের কারণে একপর্যায়ে লালখান বাজার থেকে কাজীর দেউড়িমুখী যানবাহন চলাচলের রুট পরিবর্তন কওে দিতে বাধ্য হয় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।
মেলার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, আউটার স্টেডিয়াম কিংবা জিমনেশিয়াম মাঠের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম আয়তনের জায়গায় আয়োজিত মেলায় বসেছে বিভিন্ন ধরণের স্টল। হরেক রকম পণ্যের পসরায় সাজানো হয়েছে এসব স্টল। দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য, নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য, বৃক্ষ, ফুলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রদর্শনী ও বিক্রয় করা হচ্ছে স্টলগুলোতে। প্রতিটি স্টলেই উপচে পড়া ভিড় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের। এদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্টলের লোকজনকে।
চট্টগ্রাম নগরীতে আয়তন ও জনসংখ্যার তুলনায় বিনোদনের সুযোগ খুব বেশি নেই। তাই যে কোন মেলার প্রতি অন্যরকম মোহ ও আগ্রহ কাজ করে মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী বিজয়মেলার প্রতি রয়েছে মানুষের বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু মেলার স্থান ও সুযোগ সুবিধা নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন আগত দর্শনার্থীরা।
নগরীর ষোলশহর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিজয়মেলা ঘুরতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী রাশেদুল ইসলাম বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির সুযোগে এসেছিলাম বিজয় মেলা দেখতে। কিন্তু যতটুকু জায়গায় মেলার আয়োজন করা করা হয়েছে তা এ ধরনের বিজয়মেলার জন্য বলতে গেলে একেবারে অপ্রতুল।
এত মানুষের ভিড়ে একটু স্বস্তিতে সবগুলো স্টল ঘুরে দেখার অবস্থাও নেই। এ ধরনের মেলার জন্য আরও সুপরিসর স্থান নির্ধারণ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আগ্রাবাদ থেকে স্কুল পড়ুয়া সন্তান অনীককে নিয়ে মেলায় এসেছেন সানজিদা আকতার। দর্শনার্থীদের ভিড় ঠেলে প্রবেশ গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই ছেলের আগ্রহ মেটাতে ছুটে গেলেন মাঠের পূর্ব পাশে ‘রাইডস জোনে’। ছেলেকে একটি রাইডসে বসিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কাছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, অন্যান্য মেলার চেয়ে বিজয়মেলার আবেদন ও আকর্ষণ ভিন্ন রকম। এই মেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আবেগ। তাই ছেলেকে নিয়ে এখানে আসা। তিনি বলেন, এখানে আসাটা শুধু স্টল দেখা কিংবা জিনিস কেনার জন্য নয়, বিজয়মঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোও উপভোগ করাও বড় কারণ।
কথা হয় বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব আহমেদ নেওয়াজের সঙ্গে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের এই বিজয়মেলা আমাদের তিন যুগের ঐতিহ্য। আমাদের ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা এবং সর্বশেষ গণঅভ্যুত্থানের চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে এই মেলার আয়োজন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে’ এই শ্লোগান নিয়ে ১১ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। ছয়দিন ব্যাপী এই বিজয় মেলায় রয়েছে কথামালা, নাচ, গান, নাটক, আবৃত্তি, শিশু চিত্রাঙ্কন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন।
এছাড়াও মেলার শতাধিক স্টল সাজানো হয়েছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য, নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য, বৃক্ষ, ফুলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মেলা শেষ হবে।
আ. দৈ./ সাধ