সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫,
১৫ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
জাতীয়
মির্জা আজম-স্ত্রীর অঢেল অবৈধ সম্পদ, দুদকের মামলায় ৮০ অ্যাকাউন্টের তথ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Friday, 13 December, 2024, 7:51 PM  (ভিজিট : 71)

টানা ১৫ বছর ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, ফ্যাস্টি সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং নেতারা। তাদের অবৈধ প্রভাব,ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, রাষ্ট্রের অর্থ ও ব্যাংকের টাকা লোপাটের লাগাম টেনে ধরার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি। ১৫ বছরে মির্জা আজম-স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর  মিলে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

 অবশেষে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর  প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতা,সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও তার স্ত্রী দেয়ান আলেয়ার বিষয়টি বেশ আলোচনা উঠে এসছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান শেষে দায়ের করা মামলায়। 

সূত্র মতে, মির্জা আজম ও তার স্ত্রীর নামে ৮০টি ব্যাংক হিসাবে ৯০৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের সুনিদিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বৈঠকে ওই অভিযোগে মির্জা আজম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ সালে ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ সালের ৪(২, ৩) ধারায় মামলা দুইটি রেকর্ড করার অনুমোদন দিয়েছেন।

গত ১২ ডিসেম্বর দুদকের সমন্বীত ঢাকা জেলা-১ এর কার্যালয়ে মির্জা আজমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নম্বর-৩ এবং তার স্ত্রী দেয়ান আলেয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নম্বর-৪। দুদকের উপ পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন এবং সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা  দুটি দায়ের করেন।

মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে,সাবেক প্রতিমন্ত্রী  মির্জা আজমের নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত ২৪টি ব্যাংক হিসাবে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩৯০ কোটি ৮১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৭৯ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৩৮৯ কোটি ৭১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৬ টাকা উত্তোলন করেছেন। সর্বশেষ স্থিতি ছিল এক কোটি ১০ লাখ ১১ হাজার ৯১৩ টাকা, পরে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফ্রিজ করা হয়েছে।

এছাড়া আসামি মির্জা আজমের নিজ নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি অথবা প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৩টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ঋণ উত্তোলন করেছেন। ১৩টি ব্যাংক হিসাবে অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ২৯৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮৫ টাকা উত্তোলন করেছেন এবং ৩০০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৪ টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি ‍দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, মির্জা আজম ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা পর্যালোচনায় পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে দাখিলকৃত হলফনামায় তিনি ১ কোটি ১৮ লাখ ৮ হাজার ৪০৫ টাকার সম্পত্তি অর্জনের তথ্য প্রদর্শন করেন। ২০১৪ সালের হলফনামায় তিনি ১৫ কোটি ৫১ লাখ ৭৫ হাজার ১৬১ টাকার সম্পত্তি অর্জনের তথ্য প্রদর্শন করেন।

গত ৫ বছরে তার সম্পত্তি ১৩.১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়। তিনি ২০১৮ সালে দাখিলকৃত হলফনামায় ৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ টাকার সম্পত্তি অর্জনের তথ্য প্রদর্শন করেছেন। ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে অর্থাৎ বিগত ১০ বছরে তার সম্পত্তি ৪৫.৭১ গুণ বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া যায়।

সর্বশেষ ২০২৩ সালে মির্জা আজমের দাখিলকৃত হলফনামায় ৮৪ কোটি ৫৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৩ টাকার সম্পত্তি অর্জনের তথ্য প্রদর্শন করেন। এক্ষেত্রে ২০০৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তার সম্পত্তি ৭১.৬ গুণ বৃদ্ধি  পেয়েছে। সম্পত্তি বৃদ্ধির বিপরীতে আনুপাতিক হারে তার বৈধ আয়ের উৎস প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মামলার বিবরণীতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, মির্জা আজম জামালপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি সহসেবে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি নামে-বেনামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টাকা ৮০ পয়সা এবং তার মেয়ে মির্জা আফিয়া আজম অপি'র নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাতআয় বহির্ভূত সম্পত্তি অবৈধ পন্থায় অর্জনপূর্বক নিজের দখলে রেখেছেন।

শুধু তাই নয়,মির্জা আজমের অপরাধলব্ধ ২০ কোটি ৭৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্যদের নামে হেবা বা দান কিংবা বিনিময়ের মাধ্যমে হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন।

এছাড়াও তিনি নিজ নামে, তার বিভিন্ন কোম্পানী/প্রতিষ্ঠান এবং স্ত্রী দেওয়ান আলেয়াসহ তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানীর নামীয় মোট ৬০টি ব্যাংক হিসাবে  চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার ২৩২ টাকা জমা হয় এবং ওইসব ব্যাংক হিসাব থেকে মোট ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকা উত্তোলন করেছেন।

 যা অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে জ্ঞাতসারে তাদের অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে ছদ্ধাবরণ করত: মানিলন্ডারিং করে তারা উভয়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারা ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। আর এসব অপরাধের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও তার স্ত্রী আসামী দেওয়ান আলেয়ার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

আ. দৈ. /কাশেম


আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টঙ্গীতে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
টঙ্গীতে ঝুটের গুদামে ভয়াবহ আগুন, আধাঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
ইউনিয়ন ব্যাংকেরও শীর্ষ খেলাপি দেশবন্ধু গ্রুপ
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ৮৯৬তম সভা অনুষ্ঠিত
ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
শিগগিরই ঢাকা শহরে অটোরিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসক
জাতীয়- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝