ভারত ফের চালু করতে যাচ্ছে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ পদ্ধতি, যেখানে একই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের জন্য ভোটগ্রহণ হবে। এই পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে এবং বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করার প্রস্তুতি চলছে। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রায় ছয় দশক পর আবারও একযোগে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারতের স্বাধীনতার পর প্রথম ১৯৫২ সালে এই মডেল অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন একই সময়ে সংসদ এবং রাজ্য বিধানসভার ভোটগ্রহণ করা হতো।
১৯৬৭ সাল ছিল ভারতের ইতিহাসে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ পদ্ধতিতে পরিচালিত শেষ ভোট। ওই বছর ১৫ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হয়। এতে লোকসভার ৫২০টি আসন এবং ৩,৫৬৩টি রাজ্য বিধানসভা আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে উত্তর প্রদেশে চার দফায় ভোট হয়েছিল, যা ওই সময়ে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ছিল।
১৯৬৭ সালের পর ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখে পড়ে। সেই সময় জোট রাজনীতির উত্থান ঘটে এবং ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জনগণের মধ্যে ক্ষমতাসীন-বিরোধী মনোভাবের মুখোমুখি হয়।
তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনি অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং শরিকদের চাপে পড়েন। এর আগেই ১৯৬২ সালে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতের পরাজয় দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এসব ঘটনার প্রভাবে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যায় এবং আলাদা সময়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের নির্বাচন শুরু হয়।
আবার কেন চালু হচ্ছে?
ভারত সরকার মনে করছে, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা খরচ কমাবে, প্রশাসনিক জটিলতা দূর করবে এবং ভোট পরিচালনা সহজ হবে। একইসঙ্গে, এই পদ্ধতিতে সরকারের কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা আসবে বলে দাবি করা হচ্ছে।
প্রস্তাবটি নিয়ে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, এই মডেল ক্ষমতাসীনদের পক্ষে কাজ করবে এবং আঞ্চলিক রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অন্যদিকে, সরকার বলছে, এটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এখন দেখার বিষয়, পার্লামেন্টে বিলটি পাস হয় কি না এবং ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ পদ্ধতি চালু হলে ভারতের নির্বাচনি ব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আসে।
আ. দৈ./ সাধ