প্রেম ও দ্রোহের অমর কবি হেলাল হাফিজ আর আমাদের মাঝে নেই। আজ শুক্রবার শাহবাগের সুপার হোম হোস্টেলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জানা গেছে, হোস্টেলের ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান তিনি। দুপুর ২টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় এবং পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
বর্তমানে তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কবি হেলাল হাফিজ বহু স্মরণীয় কবিতার রচয়িতা। তার রচিত 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' কবিতার দুটি অমর পঙক্তি— “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় / এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”— বাংলাদেশের গণ-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে হেলাল হাফিজ গ্লুকোমা, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস এবং স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন কবি ও কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হাসান হাফিজ।
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেন হেলাল হাফিজ। তিনি ১৯৬৫ সালে নেত্রকোণা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোণা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পেশাগত জীবনে তিনি ১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর দৈনিক দেশ পত্রিকায় সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল দৈনিক যুগান্তর।
হেলাল হাফিজের প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে, যা তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ ২৬ বছর পর ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’।
তার 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' কবিতার অমর দুটি পঙক্তি—“এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় / এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”—আজও পাঠকের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এর আগে তিনি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কারসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হন।
হেলাল হাফিজের চলে যাওয়া বাংলা সাহিত্য ও কবিতার জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার স্মৃতি ও সাহিত্যকর্ম চিরকাল প্রেরণা হয়ে বেঁচে থাকবে।
আ. দৈ./ সাধ