কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যাওয়ার পথে দানু মিয়া (৩৯) নামের এক হত্যা মামলার আসামিকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। আহত অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত আরেকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত দানু মিয়া মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মাহারা পাড়ার মৃত কলমদারের ছেলে। আহত মো. মুবিনুল ইসলাম (৩০) চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের ছড়াপাড়ার ছাবের আহমদের ছেলে। দুজনের পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজনকে বেঁধে রেখে পেটায় দুর্বৃত্তরা।
দানু মিয়া ও মুবিনুল ইসলাম দুজনই একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার আসহাবুল করিম ওরফে জিহাদকে চকরিয়ার কোনাখালী এলাকায় ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় জিহাদের বাবা মকছুদুল করিম ১২ জনের নাম উল্লেখ করে চকরিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে আসামিদের তালিকায় ৬ নম্বরে দানু মিয়া ও ৯ নম্বরে মো. মুবিনুল ইসলামের নাম রয়েছে।
নিহত দানু মিয়ার পরিবারের সদস্য, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, জিহাদ হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন দানু মিয়া ও মুবিনুল ইসলাম। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনাখালীর ছড়াপাড়া থেকে সিএনজিচালিত দুটি অটোরিকশায় তারা আত্মসমর্পণ করতে চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাচ্ছিলেন।
তাদের সঙ্গে একই মামলায় জামিনে থাকা মোবারক আলী নামের এক আসামিও ছিলেন। তারা ইদমনি লাল ব্রিজের পাশের মসজিদের সামনে পৌঁছালে অন্তত ১৫ থেকে ২০ দুর্বৃত্ত তাদের গতি রোধ করে। তারা একযোগে দানু মিয়া, মুবিনুল ইসলাম ও মোবারক আলীর ওপর হামলা শুরু করে।
হামলার এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা দানু মিয়া ও মুবিনুল ইসলামকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। পরে পেকুয়ার সিকদারপাড়া মসজিদের পাশে নুরুল আজিমের পরিত্যক্ত দোকানে বেঁধে রেখে দুজনকে দিনভর পেটানো হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে গেলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হয়।
অ্যাম্বুলেন্সটি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আহত দানু মিয়া ও মুবিনুল ইসলামকে নিয়ে কোনাখালীর ছড়াপাড়া এলাকায় পৌঁছে। সেখান থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্সে দানু মিয়াকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন তার পরিবারের সদস্যরা। পথে রাত ১০টার দিকে পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় দানু মিয়ার মৃত্যু হয়। মুবিনুল ইসলামকে পৃথকভাবে তার আত্মীয়স্বজনেরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।
দানু মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আকতার বলেন, দানু মিয়ার হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী। তাকে আমাদের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চেয়েও পাইনি। জানি না মামলাটিও সঠিক আসামিদের বিরুদ্ধে করতে পারব কি না।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, দিবাগত রাত একটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে দানু মিয়ার লাশ থানায় আনেন তার পরিবারের লোকজন। যেহেতু হত্যার একটি বিষয়, তাই অ্যাম্বুলেন্সের চালককে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কারা দানু মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়েছে, তা বের করার চেষ্টা চলছে। দানু মিয়ার লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আ. দৈ/ আফরোজা