সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের কূটনৈতিক পাসপোর্টের পরিবর্তে সাধারণ পাসপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে। সাধারণ পাসপোর্ট দেয়ার জন্য ক’দিন আগে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের সাধারণ পাসপোর্ট পেতে কমপক্ষে দুটো গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক প্রতিবেদন লাগবে। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার পর্যন্ত ভারতের মাটিতে ২৬ দিন পার করেছেন। কূটনৈতিক পাসপোর্টের নিয়ামনুয়ায়ী তিনি আর ১৯ দিন বৈধ ভাবে থাকতে পারবেন ভারতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তার ক’টনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। ফলে তাকে নিয়ে একটি সংকট তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় তাঁর ভারতে অবস্থানের সময় নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই যখন অবস্থা তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে গত সপ্তাহে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রাক্তন মন্ত্রিসভার সদস্য, সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় সংসদের সকল সদস্যসহ যে সকল ব্যক্তিবর্গ কোন পদে অধিষ্ঠিত থাকার কারণে কূটনৈতিক পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ায় কূটনৈতিক পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন উক্ত পদে তাদের নিয়োগ বা কর্মকালের অবসান ঘটলে তাদের এবং তাদের স্পাউসগণের কূটনৈতিক পাসপোর্ট অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। উল্লেখিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন অন্তত দুটো গোয়ন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের অনুকুলে সাধারণ পাসপোর্ট ইস্যু করা যেতে পারে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছাড়া আর অন্য কোনো পাসপোর্ট নেই। ইতিমধ্যে তিনি ভারতে প্রায় তিন সপ্তাহ কাটিয়ে ফেলেছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করার পরপরই রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবউদ্দিন সংসদ ভেঙে দেন। এসব ব্যক্তির পাশাপাশি কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের মধ্যে যাঁদের চাকরি বা চুক্তি শেষ হয়ে গেছে বা চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
ভারতের সরকারি সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করার পর শেখ হাসিনার এখন আর কোনো পাসপোর্ট নেই। ভারতের ভিসা নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশি কূটনীতিক বা কর্মকর্তাদের সরকারি পাসপোর্ট থাকলে তাঁরা ভিসা ছাড়াই ভারতে আসতে পারেন। তাঁরা চাইলে টানা ৪৫ দিন ভারতে থাকতে পারেন। গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিনি হিসাব করলে ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা ২৬ দিন ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। বৈধভাবে তিনি আরও ১৯ দিন ভারতে থাকতে পারবেন।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। যার বেশিরভাগই হত্যা মামলায়। বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হচ্ছে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভারত থেকে তাকে ফিরিয়ে আনার আলোচনাও শুরু হয়েছে। যারা মামলা করেছেন তাদের দাবী শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পন চুক্তির আওতায় দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার চাইলে প্রত্যার্পণ চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর জন্য ভারতের কাছে আবেদন করতে পারেন। মামলায় যদি রাজনৈতিক কোনো ধরন বা উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তাহলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ ভারত সরকার নাকচ করতে পারে। তবে খুনের মতো অপরাধের মামলাকে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক বলে বিবেচনা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তির প্রত্যর্পণের অনুরোধ আরেকটি কারণে প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলা ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে সৎ উদ্দেশ্যে’ করা না হলে সরকার প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে হওয়া প্রত্যার্পন চুক্তির চেয়ে এর আগে হওয়া বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে কয়েকজনকে ফেরত এনেছে বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে রয়েছেন নারায়নগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেন এবং ভারতে একটি হত্যা মামলায় সন্দেহজনক ভাবে গ্রেপ্তার বাদল ফরাজী। একই ভাবে বাংলাদেশ থেকে অনুপ চেটিয়াসহ কয়েকজনকে ফেরত নিয়েছে ভারত। তবে শেখ হাসিনা বন্দি না থাকায় তাকে ফেরত আনতে হলে প্রত্যার্পন চুক্তির মাধ্যমে ফেরত আনা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আ.দৈ./ কাশেম/ওমর ফারুক