ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্ত্বাধীন টানা ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বতীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় বেশ কয়টি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেল করেছে এই সরকার। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য-আনসার বিদ্রোহ, চিকিৎসক ও স্টাফদের ধর্মঘট,সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যানারে সরকার বিরোধী কর্মসূচি,দফায় দফায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজপথ দখল করে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জ্বালাও - পোড়াও কর্মসূচি পালন, রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশার মালিক-শ্রমিকদের অসহযোগ অন্দোলন।
বর্তমানে চলছে সনাতনী ধর্মালন্বীদের কথিত জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংশতাকে কেন্দ্র করে এখনো দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার চলছে। তবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বতীকালীন সরকার একের পর এক এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সামনে আরো বেশ কিছু বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবেএই সরকারকে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এই সরকারের চ্যলেঞ্জ আরো বাড়ছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদিকে একের পর এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হিমশিক খাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বতীকালীন সরকার। ঠিক সেইসময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা,উপজেলা পর্যায়ে সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সেক্টর করপোরেশনে ব্যাপক নিয়োগ, বদলি ও পদায়ন বাণিজ্যের নজির স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলসহ তাদের সমমনা পেশাজীবী সংগঠনের কতিপয় প্রভাবশালী নেতা ও কর্মীরা।
শুধু তাই নয়,অন্তর্বতীকালীন সরকারের সামনে হুট করে সামনে চলে আসছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডের বাসা বাড়ির ময়লা আর্ব্যজনায় পাওয়া গেছে টাকার খনি। আর এই খনি দখলে নিতে প্রতিযোগিতায় নামছেন প্রভাবশালীরা। জানা যায়, ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের বাসা- বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা, আর্বজনা সংগ্রহের কাজটি ভাগিয়ে নিতে বিএনপির রাজনৈতিক শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা, সাবেক মন্ত্রী, এমপি, মেয়র প্রার্থী, ওয়ার্ড কাউন্সিল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল,ছাত্র দল,এবং সাবেক আমলাদের নাম ব্যবহার করে তাদের পক্ষ থেকে ডিএনসিসির প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব এবং প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার দপ্তরে দফায় দফায় টেলিফোন করার পাশাপাশি দলেবলে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তদবিরকারীদের পক্ষ থেকে এমন হুমকি আসছে, তাদের লোকজনকে কাজটি দেওয়া হলে, রক্তের বন্যা বইয়ে যাবে। অন্যরা কিভাবে ফিল্ডে কাজ করবেন তা দেখে নেওয়া হবে। ফলে ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একধরনের অমানবিক চাপের পাশাপাশি নিজের মর্যাদা ও এই প্রতিষ্ঠানকে সুন্দরভাবে পরিচালনার বিষয়ে বেশ আতঙ্কে আছেন। কারণ টাকার খনি ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের ময়লা আর্বজনা নিয়ন্ত্রণে মরিয়া বিএনপির নেতারা ।
ডিএনসিসির সূত্র মতে,৫৪টি ওয়ার্ডের বাসা বাড়ির ময়লা আর্ব্যজনার কালেকশনের জন্য একটি সুন্দর নিয়ম- নীতি মেনে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে শর্তে সাপেক্ষে এক বছর মেয়াদী অনুমতি প্রদানে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ডিএনসিসি। বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক গত ১৭ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত নগদ ৫ হাজার টাকায় আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৭৬১ জন। এরপর শর্তে প্রত্যেক আবেদন ফরমের সাখে এক বছরের জামানত হিসেবে পুরানত ৩৬ ওয়ার্ডে ১০ লাখ টাকার পে অডার/ ব্যাংক ড্রাফ, আর নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে ৬ লাখ টাকা টাকার পে অডার/ ব্যাংক ড্রাফ সহ চাহিদা মাফিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
১৭ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৮০ জন আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন। এখন ৩৮০ জনই ৫৪ টি ওয়ার্ডের কাজটি ভাগিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত নিজেদের শক্তি, ক্ষমতা এবং বিএনপির হাইকমান্ডের কাছের লোক প্রমাণ করতে নানা তদবিরে ব্যস্ত। কার্যাদেশ বা অনুমতির সিদ্ধান্ত পাবার পর এক বছরের ফি একত্রে অগ্রীম পুরানত ওয়ার্ডে ১০ লাখ টাকার পে অডার/ ব্যাংক ড্রাফ, আর নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে ৬ লাখ টাকা টাকার পে অডার/ ব্যাংক ড্রাফ জমা দিতে হবে। এরপর বর্জ্য কালেকশন এবং বাসা বাড়ির থেকে টাকা নেওয়ার চূড়ান্ত অনুমতি মিলবে।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন যাবৎ ডিএনসিরি এই ৫৪টি ওয়ার্ডর বাসাবাড়ির বর্জ্য কালেশকনের নামে প্রতি মাসে গড়ে ২৫ লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকার বাণিজ্য করতেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের লোকজন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ময়লার ভেতরে এতো টাকা, তাইতো রাজনৈতি দলের নেতাদের নজর ময়লা আর্বজনা কুড়ানোর দিকেই বেশি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে নির্বাচিত ৫৪ টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ,ছাত্র লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা প্রতিযোগতার মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডের ময়লা- আর্বজনা সংগ্রহের কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। কারণ ময়লা এখন টাকার খনিতে পরিনত হয়েছে। অতীতে এই টাকার খনি নিয়ন্ত্রণে নিতে রীতিমতো মারামারি এবং বিচার শালিস পর্যন্ত হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নগর ভবনের পরিবেশ পরিস্থিতি যে কোনমূল্যে স্বাভাবিক রাখতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫/১৬ বছরের নির্যাতিত রাজনৈতি নেতা- কর্মীদের পাশাপাশি ডিএনসিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মনের ক্ষোভ আছে। তবে এবার ৫৪ ওয়ার্ডের বাসা বাড়ির ময়লা আর্ব্যজনার কালেকশনের অনুমতি সংক্রান্ত কার্যাদেশ দেওয়ার আগে জমা পড়া আবেদনগুলো বাচাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ সরাসরি একজন কার্যাদেশ দেওয়াটা অনেক কঠিন হবে। ওই সময় সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অনেক কঠিন হবে।
প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়েন এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নগর ভবনে রাখতে পারলে ভাল হবে। এছাড়া নগরভবনে আবেদকারীদের সীমিত সংখ্যক প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রয়োজনে ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রকাশ্য লটারির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিলে ভাল হবে। এাঁ এই অন্তর্বতীকালীন সরকার, ডিএনসিসির প্রশাসক এবং বিএনপির জন্যও একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আ. দৈনিক / কাশেম