সিরিয়ার বৃহত্তম দুই শহর আলেপ্পো এবং হামা দখলের পর সিরিয়ার বিদ্রোহী জোটের লক্ষ্য একনায়ক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা। দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বলেছেন।
তিনি বলেন, এই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিল ও থাকবে এই সরকারের পতন ঘটানো। সেই লক্ষ্যে আমরা সব ধরনের উপায় অবলম্বন করব।
জোলানি একসময় আল-কায়েদার শাখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তাদের লক্ষ্য আসাদ সরকার উৎখাত করে একটি জন-নির্বাচিত পরিষদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের পতনের বীজ তার নিজের মধ্যেই রয়েছে। ইরান ও পরে রাশিয়া তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও, সত্য এটাই যে এই সরকার মৃতপ্রায়।
গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্রোহীদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিতে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো এবং কৌশলগত শহর হামা তাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এই অগ্রযাত্রা আসাদ এবং তার মিত্র ইরান ও রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের ধাক্কা এবং সিরিয়ার স্থবির গৃহযুদ্ধকে নতুন করে উস্কে দিয়েছে।
এইচটিএস-এর সামরিক সাফল্য তাদের শক্তি বৃদ্ধি করলেও দলটির অতীত সম্পর্ক এবং চরমপন্থি ইসলামি আদর্শ প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। যদিও দলটি আল-কায়েদা থেকে নিজেদের আলাদা করেছে, যুক্তরাষ্ট্র এইচটিএস-কে ২০১৮ সালে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে।
সাক্ষাৎকারে জোলানি এক নতুন পরিচয়ে হাজির হন। তিনি তার আসল নাম আহমেদ আল-শারা প্রকাশ করেন এবং আগের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে একটি নতুন সিরিয়া গঠনের পরিকল্পনার কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে ভয় পায়, তারা হয় সঠিক বাস্তবায়ন দেখেনি বা তা সঠিকভাবে বোঝেনি। আসাদ সরকার পতনের পর একটি সংগঠিত শাসন ব্যবস্থা এবং সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দিকে এগোবে।
জোলানি জানিয়েছেন, তার দল সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। তিনি বলেন, কেউ কারও অস্তিত্ব মুছে ফেলার অধিকার রাখে না। এই অঞ্চল শত শত বছর ধরে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের সহাবস্থান দেখেছে।
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এইচটিএস-কে বিদ্রোহী এলাকায় বিক্ষোভ দমন এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্যাতনের জন্য অভিযুক্ত করেছে। এ বিষয়ে জোলানি বলেন, যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জোলানি বিদেশি সেনাদের সিরিয়া থেকে প্রত্যাহারের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি এই সরকারের পতন ঘটে, বিদেশি বাহিনীর আর প্রয়োজন থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, সিরিয়াকে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা প্রয়োজন যা প্রতিষ্ঠান-নির্ভর, কোনও একক শাসকের ওপর নয়। সিরিয়ার শাসক আসাদ পরিবার ৫৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। তাদের শাসনে হাজার হাজার মানুষ নিহত, কারাবন্দি ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জোলানি বলেন, আমরা শুধু আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি না, আমরা সিরিয়া গঠনের জন্য একটি বৃহত্তর প্রকল্পে অংশ নিচ্ছি। হায়াত তাহরির আল-শাম এই সংগ্রামের একটি অংশ মাত্র। এটি কোনও শেষ লক্ষ্য নয়, বরং একটি মাধ্যম।