ভূপৃষ্ঠের ৩ ভাগ জল আর একভাগ স্থল। সাগর, মহাসাগর, নদী, হ্রদ এমনকি বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা, জলীয় বাষ্প- সবকিছুতেই পানি। পানি আছে ভূপৃষ্ঠের গভীরেও- যে পানি আমরা পান করি। এই পানিই আমাদের গ্রহকে বাসযোগ্য করে তুলেছে।
কিন্তু এই বিশাল জলরাশি কোথা কোথা থেকে এলো?
পৃথিবী প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে গঠিত হয়েছিল। তখন এটি ছিল একটি উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো গ্রহ। এ সময় পানির কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এরপর কয়েকটি সম্ভাব্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি পৃথিবীতে আসতে শুরু করে।
বিজ্ঞানীদের মতে, সৌরজগৎ গঠনের সময় মহাজাগতিক ধূলিকণা, গ্যাস, ও বরফের কণাগুলো একত্রিত হয়ে পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহ তৈরি করেছিল। এই ধূলিকণা ও বরফের কণাগুলোর ভেতরে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ছিল। এগুলোই পরবর্তীতে পানি তৈরির মূল উপাদান হিসেবে কাজ করেছে।
পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাসে, অনেক গ্রহাণু ও ধূমকেতু পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটিয়েছিল।
এসব গ্রহাণু ও ধূমকেতুতে প্রচুর পরিমাণে বরফ ছিল। যখন এই বরফ গলে যায়, তখন তা পানিতে রূপান্তরিত হয়। বিশেষ করে ধূমকেতু (যাকে বরফের পাহাড় বলা হয়) পৃথিবীতে পানি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বলে ধারণা করা হয়।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ছিল, যা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে আসতে থাকে। এই জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে তরল পানিতে রূপ নেয় এবং জমতে শুরু করে। এভাবে পৃথিবীর প্রথম সমুদ্রের সৃষ্টি হয়।
একসময় পৃথিবীর অশান্ত বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়, তখন পানি চক্র শুরু হয়। বায়ুমণ্ডল থেকে বৃষ্টি হয় এবং সেই বৃষ্টি সমুদ্র, নদী, ও হ্রদ তৈরি করে। সূর্যের তাপ পানি বাষ্পীভূত করে আবার বৃষ্টি আকারে নামিয়ে দেয়। এ প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত রয়েছে।
মোদ্দাকথা, পৃথিবীর পানি আসলে মহাজাগতিক ঘটনাগুলোর এক বিস্ময়কর ফল। গ্রহাণু ও ধূমকেতুর বরফ, আগ্নেয়গিরির জলীয় বাষ্প, এবং পৃথিবীর অনুকূল অবস্থান- সবকিছুর মিলিত ফলেই এত বিশাল পরিমাণ পানি পৃথিবীতে এসেছে। এটি শুধু পৃথিবীকে জীবনের জন্য উপযোগী করে তোলেনি, বরং এখানকার প্রাণী ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস
আ.দৈ/এআর