রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫,
৬ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
জাতীয়
রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরির তথ্য প্রকাশ করাই শ্বেতপত্র কমিটির কাজ : ড. দেবপ্রিয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Monday, 2 December, 2024, 5:46 PM  (ভিজিট : 45)

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্তাধীন সরকারের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোপাট, বিদেশে পাচারসহ নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির সঠিক চিত্র উদঘাটনে 'শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। মোট ১২ জন নামকরা অর্থনীতিবিদ নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ।

ই কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইতোমধ্যে শ্বেতপত্র কমিটির মাধ্যমে এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এই শ্বেতপত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, দুর্নীতির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। কমিটির কাজ চোর ধরা না, চুরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা।

আজ সোমবার  (০২ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ড. দেবপ্রিয় বলেন, কমিটির প্রতিটি সদস্য বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন।

 তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছে। এমনকি যতটি সভা হয়েছে, সেখানে একটি পয়সা সিটিং অ্যালাউন্স নেয়া হয়নি। এর আগে রোববার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে।

তবে বিদেশী পরামর্শক এনে এই শ্বেতপত্র করা হলে ন্যূনতম ২৫ কোটি টাকা খরচ হতো বলে জানান তিনি। ড. দেবপ্রিয় বলেন, কমিটি এটি দেশের জন্য নিঃস্বার্থ অবদান হিসেবে করেছে, যা দেশের স্বার্থে উদহারণ হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, রিপোর্টটিকে সাবধানতার কারণে এখনো খসড়া হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিছু পরিসংখ্যান পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। আগামী ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে এটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা হবে। এই রিপোর্টের গ্রন্থস্বত্ব স্বয়ং বাংলাদেশ সরকার। এটিকে সরকার নিজস্ব দলিল হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।

প্রথাগত গবেষণা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশী-বিদেশীদের সাথে আলোচনা করে এই প্রতিবেদনের নানা দিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে আমরা নিজেরা ১৮ বার সভা করেছি। নীতিনির্ধারকদের সাথে ২২ বার সভা করেছি। আমাদের প্রথম সভা ছিল ছাত্রদের সাথে। তাদের সর্বোচ্চ জোর ছিল মানসম্মত শিক্ষার ওপরে। শ্বেতপত্রের পুরো প্রক্রিয়া না বুঝলে এই দলিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জনমানুষের সাথে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে এটি প্রস্তুত হয়েছে।

শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন,দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করেন মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ। বাংলাদেশে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। সেইসঙ্গে ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করেছেন।

এর আগে দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের সময়ে গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে প্রতিটি খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে।
কমিটির পর্যবেক্ষণ:
১, রাজস্ব ফাঁকি ও আর্থিক ক্ষতি;  কর ফাঁকি, কর ছাড়ের অপব্যবহার এবং দুর্বলভাবে পরিচালিত সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছে, ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। যা বিদেশী সাহায্য এবং এফডিআই প্রবাহের সম্মিলিত মানের দ্বিগুণেরও বেশি। তদুপরি, কর ছাড় অর্ধেকে নামিয়ে আনলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ তিনগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।

২, সরকারি বিনিয়োগ; বড় আকারের সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে গড় ব্যয় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সময়সীমা পাঁচ বছরের বেশি পেরিয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে এডিপি এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন বা এক লাখ ৬১ হাজার থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ এবং ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তৈরি বাজেটের কারণে সম্পদ হারিয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের সময় তহবিলের অপব্যবহার এবং পক্ষপাতদুষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের নিয়োগ আরো বেশি সম্পদ সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। যার ফলে অবকাঠামো ও সামাজিক বিনিয়োগ থেকে সম্ভাব্য সুফল হ্রাস পেয়েছে।

৩, খাদ্যপণ্যের সরবরাহ চেইন ধ্বংস; গৃহস্থালির উৎপাদন পরিসংখ্যান বিকৃত করা এবং চাহিদা কম দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে চাল, ভোজ্য তেল এবং গমের মতো প্রধান পণ্যের ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা গেছে, যা বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে। এলোমেলো ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ক্রয় নীতিমালা শক্তিশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা দিয়েছে এবং সাধারণ ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। নিয়মিত মজুত পর্যবেক্ষণের অভাবে এই সমস্যাগুলোকে আরো জটিল করেছে।

৪, ব্যাংকিং এবং আর্থিক ব্যবস্থা; রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ঋণদান প্রক্রিয়া ব্যাংকিং খাতের সঙ্কটকে আরো গভীর করেছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আর্থিক মূল্য হিসাব করলে ১৪টি ঢাকা মেট্রো সিস্টেম বা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণের সমান হবে। ধারাবাহিক ঋণ খেলাপি এবং উচ্চ প্রোফাইল জালিয়াতি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং উৎপাদনশীল খাত থেকে মূলধন সরিয়ে নিয়েছে।

৫, শ্রম অভিবাসন ; গত এক দশকে ১৩ লাখ চার হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে রিক্রুটিং অ্যাজেন্সিগুলো ভিসা ক্রয়ের জন্য ব্যয় করেছে। যা ঢাকা এমআরটি-৬ (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণের খরচের চার গুণ। সিন্ডিকেট এবং শোষণমূলক রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। যার রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

৬, সামাজিক সুরক্ষা নেট; সামাজিক সুরক্ষা প্রোগ্রামের মধ্যে তহবিলের অযথা ব্যয় লাখ লাখ মানুষকে বিপন্ন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ২০২২ সালে ৭৩ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাভোগী গরিব হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয়নি।

৭, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা; জলবায়ু অভিযোজন তহবিলের মধ্যে দুর্নীতি পরিবেশগত অবক্ষয়কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত জলবায়ু সম্পদের অপব্যবস্থাপনা স্থায়িত্বমূলক উদ্যোগগুলোকে ব্যাহত করেছে এবং জলবায়ু-উদ্ভূত ঝুঁকির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

আ. দৈ./ কাশেম

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

থানায় বসে এসআইয়ের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল
‘ঋণখেলাপিরা যাতে বিএনপির মনোনয়ন না পায় সে চেষ্টা করব’
কক্সবাজারের হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টী পরিমল শর্মার সংবর্ধনা
ফরিদপুরে শহীদ জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা
বাংলাদেশে বায়ু দুষণের বছরে ১,০২,৪৫৬ জনের মৃত্যু
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতারা গন সংযোগে ব্যস্ত
চায়না পোশাকে সয়লাব দেশ
দুদকের মামলায় বিএফআইইউয়ের মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন যারা
ডিবি হারুনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন ডা. সাবরিনা
জাতীয়- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝