সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫,
১৫ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
বিনোদন
ধানমন্ডিতে শিল্পীদের সমাবেশে সাড়া দিলেন জনতা
Publish: Friday, 2 August, 2024, 5:20 PM  (ভিজিট : 84)

আজ শুক্রবার (০২ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের চলমান অন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত শিল্পী ও সাধারণ মানুষ ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদে শামিল হলেন। তাঁরা নিহত হওয়ার সঠিক সংখ্যা প্রকাশ, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, বিচার ও হত্যার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।

‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে আবাহনী মাঠের সামনে প্রতিরোধী শিল্পীদের সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

আজ সকাল থেকেই মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সমাবেশে দৃশ্যশিল্পী, আলোকচিত্রশিল্পী, পারফরম্যান্স–শিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, লেখক, গবেষক, স্থপতি, শিল্প সংগঠকসহ অনেক সাধারণ নাগরিক অংশ নেন।

শিল্পীরা হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য নিয়ে দীর্ঘ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন করেন। বৃষ্টির কারণে অঙ্কন দ্রুত শেষ করতে হয়। তবে এরপর তাঁরা ‘আস্থা-অনাস্থা’ নামের একটি বেদনাবিধুর আবেগময় পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেন। পথচলতি শত শত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিবাদী আয়োজনে অংশ নেন।

ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশ দীর্ঘতর হতে থাকে। একপর্যায়ে তা দীর্ঘ মানববন্ধনের পরিণত হয়। আয়োজকদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও স্লোগানে কণ্ঠ মেলান। চারপাশে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা আয়োজনে কোনো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি।

শুরুতেই ছিল প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন। এরপরে ‘আস্থা-অনাস্থা’ নামের সেই পারফরম্যান্স। মাইকে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনের বিষয়টি বর্ণনা করা হচ্ছিল। শিল্পীরা সড়কের ওপরে মিছিলের মতো আবহ সৃষ্টি করেন। এরপর গুলিবর্ষণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে ওঠে শিল্পীদের শরীর। বৃষ্টির ধারায় মনে হচ্ছিল যেন রক্ত ঝরে পড়ছে তাঁদের শরীর থেকে।

 এরপর মাইকে গুলিতে নিহত আবু সাঈদসহ একেক জন নিহত মানুষের নাম ডাকা হতে থাকে। আর অংশগ্রহণকারীরা ‘উপস্থিত’ বলে সাড়া দিতে থাকেন। স্কুলে যেমন প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের ‘রোল কল’ করা হয়, ঠিক তেমন করে। নাম না জানাদের জন্য বলা হয়েছে ‘অজ্ঞাত’। শিল্পীদের সঙ্গে জনতাও ‘উপস্থিত’ বলে সাড়া দিয়েছেন। এই ‘পারফরম্যান্স আট’ পরিবেশনার সময় এক তীব্র বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অকালে ঝরে যাওয়া সন্তানদের কথা স্মরণ করে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সাধারণ মানুষও তাঁদের হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।

‘পারফরম্যান্স আর্ট’ পরিবেশন ছাড়াও সংগীতশিল্পীরা উদ্দীপনাময় গণসংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ‘জনতায় আস্থা, স্বৈরাচারে অনাস্থা’ এই স্লোগানসহ ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এমন বিভিন্ন স্লোগানে এলাকা মুখর করে তোলা হয়।

পারফরম্যান্সে অংশ নেন অসিত রায়, নুজহাত তাবাসসুম, আয়মান, আনন, জোহান, সাজন, জাহিদ ইসলাম, জাকির হোসেন, সোহেলী, আফসানা শারমিন, অপূর্ব, অনিকা, আদৃতা, অহর্নিশ, শেহজাদ চৌধুরীসহ অনেকে।

গান, আবৃত্তি, স্লোগান ঘোষণা পাঠের মাঝেমধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার বলেন, শত শত নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পরে এত বিপুল হত্যার ঘটনা আর ঘটেনি। এর দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা ব্রতী ও উত্তরসূরির কর্ণধার শারমিন মুর্শিদ বলেন, ‘এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদের সাহসী হতে শিখিয়েছে। ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের এই আত্মদান যেন বৃথা না যায়, সে কারণে সর্বস্তরের মানুষকে পথে নামতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।’

লেখক রেহেনুমা আহমেদ বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঠিক সংখ্যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। বিভিন্নভাবে ২১২ জনের মৃত্যুর কথা জানা গেছে। তবে প্রকৃত পক্ষে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্ত করে নিহতের সঠিক সংখ্যা ও হত্যাকারীদের শনাক্ত করে বিচার করতে হবে।

কবি সাখাওয়াত টিপু বলেন, এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমিত নেই। এখন এটি বৃহৎ গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।শিল্পী সুমনা সোমা বলেন, এই সরকার জুলাই মাসকে শোকের মাসে পরিণত করেছে। জাতি কোনো দিন এই শোকবহ ঘটনার মাসকে ভুলতে পারবে না।

আয়োজকদের পক্ষে সমাবেশের বিবৃতিপত্র পাঠ করেন কবি অরূপ রাহী। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাও এই সমাবেশে অংশ নেন। তবে তিনি বক্তব্য দেননি। বলেছেন সাধারণ মানুষের মতোই তিনি শিল্পীদের প্রতিবাদের অংশ নিয়েছেন।

আয়োজনে সমাপনী বক্তব্যে আহ্বায়ক শিল্পী মোস্তফা জামান বলেন, শিল্পীসমাজ চলমান রাষ্ট্রীয় অনাচার, অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কর্তব্য মনে করে এই সমাবেশ আয়োজন করেছে। বহু বছর ধরে দেশে গণতান্ত্রিক পরিসর অনুপস্থিত। গণমানুষ রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছে, ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে। নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের অধিকার রুদ্ধ করা হয়েছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যখন ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে এবং তা দমনের নামে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চলেছে, তখন শিল্পীসমাজ ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংহতি জানাতে পথে নেমেছে। এই আন্দোলন চলবে।

শিল্পীসমাজের তিন দফা দাবির মধ্যের রয়েছে—গণগ্রেপ্তার ও গণমামলা বন্ধ করে অবিলম্বে আটককৃত ছাত্র-জনতাকে মুক্তি দেওয়া। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় গুন্ডাবাহিনী মুক্ত করা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন আলোকচিত্রী ইমতিয়াজ আলম বেগ, শিল্পী শেহজাদ চৌধুরী, আমিরুল রাজীব, চিত্রশিল্পী কাজি তাহসিন আগাজ অপূর্ব, নুজহাত তাবাসসুম আনন, অসিত রায়, সংগীতশিল্পী বিথী ঘোষ, কৃষ্ণকলি, আলোকচিত্রশিল্পী মেহবুবা মাহজাবীন হাসান, আর্কাইভিস্ট রীশাম শাহাব, কবি শাওন চিশতিসহ অনেকে।

সমাবেশে শেষে সাতমসজিদ সড়ক দিয়ে শোভাযাত্রা করে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। সভা শেষে আগামীকাল শনিবার বিকেল তিনটায় ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে সংগীতশিল্পীদের আয়োজনে প্রতিবাদী সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

আ. দৈনিক / কাশেম

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টঙ্গীতে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
টঙ্গীতে ঝুটের গুদামে ভয়াবহ আগুন, আধাঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
ইউনিয়ন ব্যাংকেরও শীর্ষ খেলাপি দেশবন্ধু গ্রুপ
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ৮৯৬তম সভা অনুষ্ঠিত
ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
শিগগিরই ঢাকা শহরে অটোরিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসক
বিনোদন- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝