রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
আইন-আদালত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম ও নির্যাতনের শিকার ৭ শিবির নেতার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Sunday, 17 November, 2024, 4:16 PM  (ভিজিট : 164)

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের আরো ৭ নেতাকে ধরে নিয়ে অমানবিক নির্মম নির্যাতন,গুম করা এবং গুলি করে  বিনাচিকিৎসায় ফেলে রেখে পঙ্গু করার সুনিদষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগকারী শিবির নেতারা হলেন দেলোয়ার হোসেন মিশু, নুরুল আমিন, কামরুজ্জামান, মো: আলমগীর হোসেন (বগুড়ার শেরপুর), আব্দুল করিম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুরের মো: জনি ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম তারেক।

আজ রোববার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে হাজির হয়ে ভিকটিম ছাত্রশিবির নেতারা ওইসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। এসময় তাদের সাথে ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও সহকারী আইন সম্পাদক আমানুল্লাহ আদিব।

অভিযোগ-১) ভিকটিম- মো: জনি ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শাখার কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে পড়াশোনা করছিলেন। রাত ১১টার দিকে প্রশাসনের লোক, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ১৫/২০ জন তার বাড়িতে এসে পড়ার টেবিল থেকে উঠিয়ে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে বিনোদপুর বাজারে অবস্থান করা গাড়িতে উঠিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। তাকে সেখান থেকে রাজপাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় নিয়ে গিয়েই আনুমানিক রাত ১২টার পর থেকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে চালানো হয় চরম বর্বরতা। 

তার হাতের কব্জি এবং পায়ের তালুতে চাকু দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলা হয়। রাত দেড়টা থেকে ২টার পর তাকে থানা থেকে বের করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দাঁততলা নামক স্থানের একটি আম বাগানে। সেখানে নামিয়ে তার বাম পায়ে শটগান ঠেকিয়ে তিনটি গুলি করে। গুলির শব্দ শুনে এলাকাবাসী আসতে থাকলে, দ্রুত তাকে গাড়িতে উঠিয়ে ফেলে রাখে এবং আহত পায়ে পুলিশ উপর্যুপুরি আঘাত করতে থাকে। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে। হসপিটালে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকলেও কোনো চিকিৎসা তারা নিতে দেয়নি। 

তৎকালীন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ডবলু সরকার এসে ডাক্তারদের আমার চিকিৎসা করাতে নিষেধ করে যান। এভাবেই চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় চলতে থাকল তিন দিন। পরে তার বাবা হাসপিটালের পরিচালক বরাবর অভিযোগ দেন। এরপর পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয় পঙ্গু হসপিটালে। সেখানেও পাঁচ দিন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। পাঁচ দিন পর পরীক্ষা করা হয় তার পায়ের। সপ্তম দিন তার পা থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে তার পা কেটে ফেলা হয়। সেখান থেকে তাকে বন্ধুকযুদ্ধের নামে নাটক সাজিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখন পর্যন্ত ২৫টি মামলা নিয়ে তিনি দিনাতিপাত করছেন।

অভিযোগ-২) ভিকটিম- মো: আব্দুল করিম। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের বাঁশখালী থানার একজন কর্মী ছিলেন। ২০১৩ সালে ৩ মার্চ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে এবং মুক্তির দাবিতে সারাদেশের মতো শেখেরখীল রাস্তার মাথা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শান্তিপূর্ণ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আকস্মিকভাবে হামলা ও গুলি চালায়।

 এক পর্যায়ে একটি বুলেট এসে তার মেরুদণ্ডে এসে লাগে। প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম সদর হসপিটালে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বাধার কারণে স্থলপথে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগঠনের ভাইয়েরা বঙ্গোপসাগরের বিপদসংকুল পথে ট্রলার যোগে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে পৌঁছে। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক আপারগতা প্রকাশ করে এবং ভিকটিমের মেরুদণ্ড অকার্যকর ঘোষণা করে। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি বেসরকারী হসপিটালে নিয়ে আসা হয়। তিনি ১১ বছর যাবৎ একটি বেসরকারী হসপিটালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সেটাই তার স্থায়ী নিবাস।

অভিযোগ-৩) ভিকটিম- মো: আলমগীর হোসেন। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের জনশক্তি ছিলেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদির রায়ের প্রতিবাদে পবিত্র শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে মির্জাপুর বাজার থেকে শন্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ, বিজিবি এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা উপর্যুপরি হামলা ও গুলি চালাতে থাকে। একটি বুলেট এসে তার ডান কানে এসে লাগে। 

আহত অবস্থায় পড়ে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে উঠানোর সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এসে পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে যায় এবং তাদের হাতে থাকা হকি স্টিক, লাঠি এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের হাতে থাকা রামদা দিয়ে দু’পায়ে কোপ দেয় এবং মাথায় হকি স্টিক দিয়ে আঘাত করলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তারা মৃত ভেবে ৩০ ফুট উচু ব্রিজ থেকে ফেলে দিলে তার মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। যখন তার জ্ঞান ফিরে আসে সে তখন একটি স্থানীয় হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়। এরপর পঙ্গু হসপিটালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে একটি বেসরকারী হসপিটালে দীর্ঘ ১১ বছর যাবৎ চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখন হুইল চেয়ারই তার নিত্যদিনের সঙ্গী।

অভিযোগ-৪) ভিকটিম- মো: দেলোয়ার হোসেন মিশু। ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এর ধারাবাহিকতায় নোয়াখালী শহরের মাইজদী পৌরবাজার থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু হলে পুলিশ হামলা চালায় এবং গুলি বর্ষণ করে। একটি রাবার বুলেট তার ডান চোখে আঘাত করে। 

স্থানীয় হসপিটালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ কেস দেখে কোনো হসপিটাল চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। পরে একটি হাসপাতালের একজন ডাক্তারের সুপারিশে চিকিৎসা দিতে রাজি হয় কতৃপক্ষ। চিকিৎসা নিলেও সে ওই চোখে আর দেখতে পান না। চিরদিনের জন্য তার এই চোখের আলো নিভে যায়।

অভিযোগ-৫) ভিকটিম- মো: সাইফুল ইসলাম তারেক। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্থানীয় থানার কর্মী ছিলেন। ১৪ জুন ২০১৭ বিকেল আনুমানিক আড়াইটার দিকে সাদা পোশাকে তার বাড়ির আঙ্গিনা থেকে এলাকাবাসী এবং তার পরিবারের সদস্যদের সামনে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এবং গাড়িতে উঠিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে এবং তাকে পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ এ নিয়ে যায়। দু’দিন পর তাকে নিয়ে নিয়ে বান্দরবন ক্যাসিংঘাটা যায়। 

যেখানে ৫৯ দিন একটি কবরের মতে রুমে বন্দি রাখা হয়। এর মধ্যে তাকে ৩৯ দিন কোনো গোসলের সুযোগ দেয়া হয়নি। পরর্তীতে ৫৯ দিন পর তাকে চোখ বেঁধে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্মম নির্যাতন চালানো হয় প্রতিনিয়ত। সাইফুল ইসলাম তারেককে ২০২০ সালের ১৯ জুন তাকে ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৫ তে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০ জুন ২০২০ সালে তাকে ফুলবাড়িয়া থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে ময়মনসিংহ কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দীর্ঘ ১০ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পায়।

অভিযোগ-৬) ভিকটিম- মো: নুরুল আমিন। তিনি তৎকালীন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভাটারা থানা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২৬ জুন ২০১৩ সালে গুলশান আজাদ মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করে বের হলে সাদা পোশাকে র‌্যাবের একটি টিম প্রথমে আব্দুস সালাম এবং পরে নুরুল আমিনকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয় এবং চোখ বেঁধে ফেলে। 

এক ঘণ্টা পথ চলার পর তাদের কোলে করে নিয়ে চারতলার একটি কক্ষে রেখে দেয়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিয়মিত নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তিন মাস ১৫ দিন পর হঠাৎ একদিন রাত ৩টার দিকে গাড়িতে করে চোখ বাঁধা অবস্থায় নূরুল আমিনকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ঘিওর নামকে স্থানে ফেলে রেখে যায় এবং আব্দুস সালাম ভাইকে সাভারের ফেলে রেখে চলে যায়।

অভিযোগ-৭) ভিকটিম- মো: কামারুজ্জামান। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন রতনহাট উপজেলার একটি ইউনিয়ন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ৪ মে ২০১৭ সে তার বন্ধুর বাসায় যান এবং সেখানেই রাত্রিযাপন করে। 

হঠাৎ রাত ২টার দিকে সাদা পোশাকে ৮/১০ জন লোক এসে জোরপূর্বক কামারুজ্জামানকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে প্রশাসনের লোক বলে পরিচয় দেয়। তাকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কারণ জানতে চাইলে তারা গালিগালাজ শুরু করে। পরবর্তীতে তাকে সাদা একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ মিলেনি।

আ. দৈ. /কাশেম

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের সংশোধন প্রয়োজন: মামুনুল হক
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
ভারত-পাকিস্তান সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে সৌদি আরব
পাঁচ বছর আগে অপহরণ হওয়া স্কুলছাত্র নিজেই ফিরল বাসায়
রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএনসিসিতে বর্জ্যব্যবস্থাপানা বিভাগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ভিডিও প্রকাশ
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
আইন-আদালত- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝