সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫,
১৫ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
আন্তর্জাতিক
উপমহাদেশের ইতিহাসে টার্নিং পয়েন্ট পাকিস্তান-বাংলাদেশ জাহাজ চলাচল !
ডেস্ক রিপোর্ট
Publish: Saturday, 16 November, 2024, 8:57 PM  (ভিজিট : 103)

স্বাধীনতার ৫৪ বছরের মাথায় পাকিস্তান-বাংলাদেশ জাহাজ চলাচল উপমহাদেশের ইতিহাসে টার্নিং পয়েন্ট। এটাকে অনেকেই ইতিবাচক দেখছেন, তবে প্রতিবেশি রাষ্ট্র এটাকে ভালভাবে নিচ্ছে না।
জানা যায়, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে একটি কার্গো জাহাজ বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। এটি স্বাধীনতার পর প্রথম ঘটনা। এ ঘটনাকে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তানি হাইকমিশন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফলে একে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে দুর্বল সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বলে দেখা হচ্ছে। অবশ্য এই পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পরে। 
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উপর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের এই যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী বড় ধরনের মেসাকার চালিয়েছিল। যা বাঙালীদের জাতীয় মানসে গভীরভাবে দাগ কেটেছে। এ ঘটনায় পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায়নি। এমনকি দুঃখও প্রকাশ করেনি। অথচ সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য এটি ছিল দরকারি পদক্ষেপ।

বাংলাদেশী-আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলি রিয়াজ ২০২১ সালে দ্য ডিপ্লোম্যাটকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এ সময় তিনি বলেছিলেন, ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য পাকিস্তানকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে তাদের সেনাবাহিনীর ঘটানো মেসাকারের জন্য বাঙালিদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমতা চাইতে হবে। অন্যথায় একটি জাতি তার অন্ধকার অতীতকে সমাধান না করে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারে না। কিন্তু ইসলামাবাদ সেটি করেনি। বরং স্বাধীনতা যুদ্ধকে তারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান প্রকল্প ভাঙার একটি ভারতীয় ষড়যন্ত্র। এটি জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ ছিল না।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ কিছু আগ পর্যন্তও বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুবই স্পর্শকাতর ও আবেগপ্রবণ বিষয় ছিল। ফলে যথাযথ ক্ষমা প্রার্থনার অভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কিছু সরকারের অধীনে অনেক তিক্ত হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার আমলে তাতে মাত্রা যুক্ত হয়েছিল। তার রাজনৈতিক এজেন্ডাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটিত নৃশংসতার বিচার চাওয়া। ফলে তার শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০২৪) যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের নির্মম বিচার করা হয়েছিল। তিনি ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন। এই ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে প্রথম যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। এরপর তার ফাঁসি কার্যকর করে।

পাকিস্তানের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান এই মৃত্যুদণ্ডকে খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের প্রতি সংহতি জানানোর জন্য তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।’ এ ঘটনায় তখন পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি নিন্দা প্রস্তাবও পাস করে।

পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়াকে শেখ হাসিনা ভালোভাবে নেননি। তখন তিনি বলেছিলেন যে পাকিস্তানের এই প্রক্রিয়া প্রমাণ করে যে তারা কখনই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়কে মেনে নেয়নি। আর তাদের এখনো বাংলাদেশে তার মিত্র রয়েছে।

শেখ হাসিনা একদিকে পাকিস্তানের সাথে দূরত্ব অবলম্বন করতেন। অন্যদিকে ভারতকে নিজের কাছে টেনে নেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকে সহযোগিতা করার কারণে অনেক বাঙালির হৃদয়ে ভারতের জন্য একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। সেজন্য দেখা গেছে, শেখ হাসিনা নিজেও নেহেরু-গান্ধী পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর তিনি নয়াদিল্লিতে আশ্রয় পেয়েছিলেন।

প্রথমত, হাসিনা দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তার দল এবং পরিবারের অবদান থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছেন। কিন্তু ছাত্রদের বিক্ষোভে যেমনটি দেখা গেছে, বাস্তব অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্বেগের মধ্যে প্রতিবাদকারীদের রাজাকার হিসেবে আখ্যায়িত করা ফলপ্রসু হয়নি।

দ্বিতীয়ত, নয়াদিল্লির সাথে হাসিনার অতিসম্পর্কের কারণে বাংলাদেশীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। অনেকের মনে হয়েছিল যে ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খুব বেশি জড়িত ছিল। হাসিনার প্রতি ক্ষোভকে ‘ভারত-বিরোধী’ মনোভাব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন গত আগস্ট মাসে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজধানীতে ভারতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (আইজিসিসি) ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জনগণ।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশে সর্বদাই একটি সংখ্যালঘু বয়ান বিদ্যমান ছিল। তবে সেটি ১৯৭১ সালের ঘটনাকে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, বরং মুসলিম জাতির ট্র্যাজেডি এবং দেশভাগের প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখেছে। এছাড়া ইসলামপন্থী জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় হাসিনা-পরবর্তী ব্যবস্থায় তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে।

এসব ঘটনা বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হাত প্রসারিত করার জন্য পরিস্থিতিকে পাকিস্তানের জন্য অনুকূল করে তোলে। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরের মাসগুলোতে একাধিক পাকিস্তানি সম্পাদকীয়তে এসব বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানি কূটনীতিক বুরহানুল ইসলাম প্যারাডাইম শিফটে লিখেছেন, ‘স্পষ্টতই সময় এসেছে বাঙালি এবং বাংলাদেশের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ার। ১৯৭১ সালের তিক্ত অনুভূতিগুলোকে কাটিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনর্গঠন করার।

ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারও এখন পর্যন্ত ইসলামাবাদের দাবিতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে তার পাকিস্তানি প্রতিপক্ষ শেহবাজ শরীফের সাথে দেখা করেন। সেখানে তিনি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

আ. দৈ. /কাশেম
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টঙ্গীতে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
টঙ্গীতে ঝুটের গুদামে ভয়াবহ আগুন, আধাঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
ইউনিয়ন ব্যাংকেরও শীর্ষ খেলাপি দেশবন্ধু গ্রুপ
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ৮৯৬তম সভা অনুষ্ঠিত
ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
শিগগিরই ঢাকা শহরে অটোরিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসক
আন্তর্জাতিক- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝