Publish: Friday, 16 August, 2024, 4:53 PM (ভিজিট : 159)

এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে শিগগিরই বিদেশ নেয়া হচ্ছে। বিএনপি তাকে বিদেশ নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি জানান, আল্লাহ যদি রহম করেন, ম্যাডামকে অতি শিগগিরই আমরা বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা উনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করব, পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়ার আগে এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৩ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়। এরপর গত ৮ জুলাই থেকে আবার বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। এমন অবস্থায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেবার সিদ্ধান্ত আসলো।
খালেদা জিয়াকে অনেক দিন ধরেই বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার চেষ্টা করছিল বিএনপি ও খালেদা জিয়ার আত্মীয়রা। এবিষয়ে একাধিকবার আবেদন করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার সে আবেদনে সাড়া দেয়নি। প্রতিবারই এই আবেদন নাকচ করে দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ ৬মাস করে বাড়িয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়ার দন্ড মওকুফ করে তাকে মুক্তি দিয়েছেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্ট তার সাজা বাড়িয়ে ১০ ববছর করে। এই সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দÐ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এরপর সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দন্ড মওকুফ করেন।
এর আগে গতবছরের অক্টোবরে তার লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “এক মাস ৮ দিন এভাকেয়ার হাসপাতালে আছেন ম্যাডাম। গত দুইদিন যাবত উনার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল বলা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাকে থাকতে হয়। এখন সিসিইউর সুবিধা সমেত কেবিনে তার চিকিৎসা চলছে। এখন তাকে বিদেশে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”
খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিএনপি নেতাকর্মীরা এক সময় ১৫ অগাস্ট ঘটা করে কেক কেটে তাদের নেত্রীর জন্মদিন পালন করতেন। ২০১৬ সাল থেকে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু দিন জাতীয় শোক দিবসের দিন ঘোষণা করার পর থেকে দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে পরদিন মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে আসছে বিএনপি। ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করাকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া চতুর্থ। পিতা এস্কান্দর মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে পিতার কর্মস্থলে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন গৃহবধূ খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনের পর একমাস এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে তিন দফা বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া।
আ. দৈনিক / একে