আলেম-ওলামারা ঘোষণা দিয়েছেন,‘বাংলাদেশে ইজতেমা দু’বার নয়, একবার হবে। গাজীপুরের টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ ও ঢাকার কাকরাইল মসজিদে- তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদপন্থীদের আর ঢুকতে দেয়া হবে না’। আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক ইসলামি মহাসম্মেলনে এসব কথা বলেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ নেতারা।
সম্মেলনে মাওলানা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, খলিল আহমাদ কাসেমী হাটহাজারী, আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, আব্দুল রহমান হাফেজ্জী, নুরুল ইসলাম, আদিব সাহেব হুজুর, ওবায়দুল্লাহ ফারুক, রশিদুর রহমান, শায়খ জিয়াউদ্দিন, শায়খ সাজিদুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ, নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাহফুজুল হক, আবু তাহের নদভী, আরশাদ রহমানি, সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মুস্তাক আহমদ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, আনোয়ারুল করীম, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মুফতি মনসুরুল হক, মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তাবলিগ, কওমি মাদরাসা ও দ্বীন রক্ষার্থে এ সম্মেলনের আয়োজন করে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ। মহাসম্মেলনে দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামরা বক্তব্য দেন।
সম্মেলনে আলেমরা বলেন, মানুষ কখনো নকল জিনিস গ্রহণ করে না। নকল বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। নকল ধারার তাবলিগ চলতে পারে না। ফ্যাসিবাদের সাথে যোগসাজশ করে নকল তাবলিগ নানা সুবিধা নিয়েছে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের আশপাশেও ঘুরঘুর করছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে।
এদিকে এই ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার আলেম-ওলামা জড়ো হন। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় এ সম্মেলন শুরু হয়। বেলা সোয়া ১টার দিকে সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।
৯ দফা দাবি :
১) এ দেশে কওমি মাদ্রাসাগুলো দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরণে শতাব্দীকাল ধরে দীনি শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসন এবং সরকারদলীয় লোকজন নানাভাবে হয়রানি ও হস্তক্ষেপ করেছিল। আমরা লক্ষ্য করছি যে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরও কওমি মাদ্রাসাগুলোর উপর ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা একটি বিশেষ মহল সুকৌশলে হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করে চলছে। আজকের মহাসম্মেলন থেকে আমরা এ জাতীয় সকল হয়রানি ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানাচ্ছি।
২) আজকের এই মহাসম্মেলন জোর দাবি জানাচ্ছে যে, সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসের সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩) বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মজলুম আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৪) ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে সারাদেশ থেকে আগত নবীপ্রেমিক নিরীহ ছাত্র-জনতা ও মুসল্লিদের উপর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যার দোষীদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় এনে বিচার কার্যকর করতে হবে এবং সারাদেশের আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার উপর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫) ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানের জোড়ের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্র- শিক্ষক এবং সাধারণ তাবলীগী সাথি ভাইদের উপর সাদপন্থিরা পুলিশ প্রশাসনের গুটিকয়েক অফিসারের সহযোগিতায় নৃশংস হামলা চালায়। আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে উক্ত হামলাকারী ও তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানানো হচ্ছে।
৬) স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদ কোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা, নবী-রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। আরো উল্লেখ্য যে, দাওয়াত ও তাবলিগের এই মকবুল মেহনত যুগ যুগ ধরে হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ, ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ.-এর উসুলের উপর পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু মাওলানা সাদ তাবলীগ জামাতের স্বীকৃত উসুল তথা নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজস্ব মতের ভিত্তিতে পরিচালনা করার অপপ্রয়াস চালায়। এ কারণে দারুল উলুম দেওবন্দসহ উপমহাদেশের প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম তার গুমরাহপূর্ণ বক্তব্য ও অবস্থানের ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। তাই ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আসতে বাধা প্রদান করেছে। বিধায় বর্তমান সরকারের নিকট অদ্যকার মহাসম্মেলন থেকে জোর দাবি জানানো হচ্ছে যে, কোনো অবস্থাতেই মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না।
৭) ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে আয়োজন করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তাই আগামী বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বেই অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি ও ০১-০২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার এবং দ্বিতীয় পর্ব ০৭-০৮-০৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার করার তারিখ আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হলো। এ ব্যাপারে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
৮) কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামে পরিচালিত হবে। উক্ত স্থানদ্বয়ে সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না।
৯) বর্তমান সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন অভিশপ্ত কাদিয়ানীদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। এবং সেই সাথে কাদিয়ানীদের ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করারও জোর দাবি জানাচ্ছে আজকের এ মহাসম্মেলন।
আ. দৈ. / কাশেম