সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫,
১৫ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
জাতীয়
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে গভর্নর
ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হাসিনার দোসররা
Publish: Monday, 28 October, 2024, 7:44 PM  (ভিজিট : 143)

বাংলাদেশের ব্যাংকখাত থেকে ১৭০০ কোটি মার্কিন ডলার পাচার করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর টাইকুন বা ধনকুবেররা। আর এ কাজে তারা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা পেয়েছেন। লুট করা এই অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। 

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ কথা জানিয়েছেন। সোমবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাথে যুক্ত টাইকুনদের বিরুদ্ধে তার শাসনামলে ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচারের জন্য দেশের শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সাথে কাজ করার অভিযোগ করেছেন।

ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিযুক্ত হন আহসান মনসুর।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে (এফটি) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সবল ব্যাংকগুলো দখলে নিতে হাসিনার ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরদের সাহায্য করেছে ডিজিএফআই।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক দখলের পর নতুন শেয়ার-হোল্ডাররদের ঋণ ও আমদানি খরচ বেশি দেখিয়ে প্রায় ১৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা) পাচার করা হয়েছে।
 
তিনি বলেন, যেকোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেই এটি সবচেয়ে বড় এবং সর্বোচ্চ ব্যাংক ডাকাতি। এই মাত্রায় আর কোথাও ব্যাংক লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। আর এর পেছনে ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। এবং গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা (ব্যাংকের সাবেক সিইওদের) মাথায় বন্দুক না ধরলে এ কাজ করা যেত না।

গভর্নর বলেন, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম আর তার সহযোগীরা ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। প্রতিদিনই তারা নিজেদেরকে ঋণ দিচ্ছিলেন, বলে জানান তিনি।

সাইফুল আলমের পক্ষে আইনজীবী প্রতিষ্ঠান কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান এক বিবৃতিতে বলেছে, এস আলম গ্রুপ গভর্নরের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, গভর্নরের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। 

প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার এস আলম গ্রুপ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রচারণা চালাচ্ছে।

গভর্নরের অভিযোগকে বিস্ময়কর এবং অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে, এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি; ডিজিএফআইয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।  

টানা দেড় দশকের বেশি সময় বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে ভোট কারচুপি, বিরোধীদের কারাদণ্ড ও দমন-পীড়ন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে ওঠে বারবার। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। 


নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর লোপাট হওয়া অর্থের সন্ধান পেতে এবং অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মানসুর গত মাসে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিদেশে থাকা সম্পদের তদন্তে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।

হাসিনার শাসনামলে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, হাসিনার শাসনামলে ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যদেরকে বাড়ি থেকে তুলে এনে হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তারপর বন্দুকের মুখে তাদের ব্যাংকের সমস্ত শেয়ার এস আলমের কাছে বিক্রি করতে এবং পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলতেন। একের পর এক ব্যাংকে তারা এ কাজ করেছে বলে জানান গভর্নর।

একটি ব্যাংকের সাবেক সিইও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, জোরপূর্বক ব্যাংক দখলের অংশ হিসেবে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক সিইও মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তিনি তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে চাপে রেখেছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশ করা ব্যক্তিদের পর্ষদ সদস্য করতে তাকে চাপ দেয়া হয়। এছাড়া সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত লোকজন ব্যাংকটির একজন বিদেশি পরিচালকের হোটেল রুমে তল্লাশি চালান।

মান্নান বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বোর্ড সভায় যাওয়ার পথে তাকে তুলে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য পুরো একটি কার্যদিবস বসিয়ে রাখা হয়। 

এ বছরের সেপ্টেম্বরে মান্নানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ইসলামি ব্যাংক থেকে পদত্যাগের ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, তারা ভুয়া স্টেশনারি নিয়ে ব্যাংকের চিঠি তৈরি করে। এ সময় আমাকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।

গত এক দশকে অনেকগুলো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এ শিল্পগোষ্ঠীর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ ৭টি ব্যাংকে তাদের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে।  

আহসান এইচ মানসুর বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেউলিয়া হওয়া প্রায় ডজনখানেক ব্যাংকের অডিট শেষ করার পর পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

তিনি বলেন, আমরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আদালতে প্রমাণ হিসেবে এই অডিট প্রতিবেদন ব্যবহার করতে চাই।

ফিন্যানসিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ব্যাংকগুলোর শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা এসব ব্যাংকের শেয়ার ভালো মানের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করে ব্যাংকগুলোতে ফের মূলধনের জোগান দেয়া। ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 


আ.দৈ/এআর 
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টঙ্গীতে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
টঙ্গীতে ঝুটের গুদামে ভয়াবহ আগুন, আধাঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
ইউনিয়ন ব্যাংকেরও শীর্ষ খেলাপি দেশবন্ধু গ্রুপ
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ৮৯৬তম সভা অনুষ্ঠিত
ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
শিগগিরই ঢাকা শহরে অটোরিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসক
জাতীয়- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝