স্বাস্থ্য অধিপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে- ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় সমান। দক্ষিণের চেয়ে উত্তরের সামান্য বেশি। কিন্তু মৃত্যুর দিক থেকে এই চিত্র একেবারেই ভিন্ন। দক্ষিণে মৃত্যুর হার উত্তরের তুলনায় তিনগুন।
চলতি বছরের ২১ অক্টোরব পর্যন্ত দেশে ৫০ হাজার ৯১৯ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে; ১০ হাজার ৫৮৯ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ১০ হাজার ৪৭৬ জন। ঢাকার পরে রোগী বেশি চট্টগ্রামে; ৯ হাজার ৩৯৭ জন। ঢাকা সিটির বাইরে ঢাকা বিভাগে ৮ হাজার ৬৫ জন, বরিশালে ৪ হাজার ৪২৪ জন, খুলনায় ৪ হাজার ২৯৬ জন, রাজশাহীতে ১ হাজার ৩৯০ জন, ময়মনসিংহে ১ হাজার ৩৭১ জন, রংপুরে ৭৯২ জন, সিলেটে ১১৯ জন।
ভর্তি এসব রোগীদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। দক্ষিণ সিটিতে মৃত্যু হয়েছে ১২৯ জনের। ঢাকা বিভাগে ৯ জন। বরিশাল-চট্টগ্রামে ২৭ জন করে, খুলনায় ১৩ জন, ময়মনসিংহে ২ জন এবং রাজশাহীতে ১ জন।
দক্ষিণে মৃত্যু বেশি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালক অধ্যাপক শেখ দাউদ আদনান বলেন- ঢাকা মেডিকেল, মুগদা মেডিকেল ও মিটফোর্র্ড এই তিনটি বড় হাসপাতাল দক্ষিণ সিটিতে। এসব জায়গায় ক্রিটিক্যাল রোগীও বেশি আসে। সেকারণে রোগী মৃত্যু বেশি হওয়া স্বাভাবিক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে- চলতি বছরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১৩৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬৮৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। মুগদা মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। চলতি বছরে এই তিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৪৫৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ৯৮ জনের।
যাত্রাবাড়ির ধলপুর এলাকার আবু হানিফ গত ২০ অক্টোবর ভর্তি হন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ১৫ অক্টোবর জ¦র আসে। জ¦র সর্ব্বোচ্চ ১০২ পর্যন্ত উঠেছে। জ¦রের সঙ্গে শরীর ব্যথা, পেট ব্যথা, বমি ছিলো। জ¦র একই রকম একনাগাড়ে ছিলো চারদিন। জ¦র না কমায় হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে ভর্তির পর জ¦র একটু কমতে শুরু করে। চিকিৎসক ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দিলে হাসপাতালে এবং বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করান। দুই জায়গায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু প্লাটিলেট কমে গেছে। প্লাটিলেট আছে ১ লাখ ১০ হাজার। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়- হাসপাতালে বিছানায় বসে হানিফ বেদানার রস খাচ্ছেন। তিনি বলেন, এই আগে ২০২২ সালেও তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হন।
পরীক্ষায় নেগেটিভ আসা প্রসঙ্গে অধ্যাপক শেখ দাউদ আদনান বলেন, জ¦র আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা না করালে নেগেটিভ আসবে। নেগেটিভ আসলেও যেহেতু তাদের লক্ষণ সবই ডেঙ্গুর, তাই ডেঙ্গু ধরে নিয়েই চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি জ¦র আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।
কীটতত্ত্ববিদ, এবং গবেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কবিরুল বাশার বলেন, যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে এবং যেখানে আক্রান্ত রোগী আছে, সেসব জায়গার দুইশ মিটারের মধ্যে থাকা উড়ন্ত সব মশা মেরে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে লার্ভা ধ্বংসের দিকেও জোর দিতে হবে। বাসা বাড়ির আশে পাশে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই কাজগুলো আমাদের ব্যক্তি উদ্যোগেই করা উচিত। কারণ আমার বাড়ির পাশে পানি থাকলে সেখানে মশা জন্মালে তা দ্বারা তো আমারই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই গুরুত্ব তো আমাকেই বেশি দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে- চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১০৫৫ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৩৯ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৩ জনের। মার্চে ৩১১ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৫ জনের। এপ্রিলে ৫০৪ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ২ জনের। মে মাসে ভর্তি হন ৬৪৪ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ৮ জনের। জুলাই মাসে ভর্তি হন ২ হাজার ৬৬৯ জন, মৃত্যু হয় ১২ জনের।
আগস্টে এসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। জুলাইয়ের তুলনায় অনেক বেশি রোগী শনাক্ত হয়। এই মাসে ভর্তি হয় ৬ হাজার ৫২১ জন, মৃত্যু হয় ২৭ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ভর্তি হয় ১৮ হাজার ৯৭ জন, মৃত্যু হয় ৮০ জনের। অক্টোবরের ২১ তারিখ পর্যন্ত এই কয়দিনে ভর্তি হয় ১৯ হাজার ৯৪১ জন, মৃত্যু হয় ৮৭ জনের।
আ. দৈ./ কাশেম / আরিফ