রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫,
১ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
বিশেষ সংবাদ
জুলাই বিপ্লবে নারী
সম্মুখ আন্দোলনে তারা ছিলেন সোচ্চার
ওয়াকিয়া কেয়া
Publish: Tuesday, 22 October, 2024, 6:03 PM  (ভিজিট : 97)


‘কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয়ালক্ষী নারী’ - কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় নারীকে পুরুষের সকল সফলতার ভাগিদার করতে চেয়েছে।  যুগ যুগ ধরে পুরুষের অর্জনের পিছনে অনুপ্রেরণা ও শক্তি জুগিয়ে এসেছে নারী।  ’২৪ এর জুলাই বিপ্লবে দেখা গেছে নারীর এক অভিন্ন রূপ। তারা কেবল  অনুপ্রেরণা  দিয়েই বসে থাকেনি   । হাতে হাত লাগিয়ে আন্দোলনের প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করে গেছে  সমানতালে। সোচ্চার ছিলো তাদের কন্ঠ।  দিনরাত তোয়াক্কা না করে সম্মুখ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারা। 

কোটা আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন কোনোটাতেই পিছিয়ে থাকেনি নারী। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই বিভিন্ন অবস্থান কর্মসুচী, ব্লকেড কর্মসুচী সবকিছুতেই নারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। ফলস্বরুপ আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে ছাত্রলীগের করা ১৫ জুলাইয়ের হামলায় আহত হয় নারীরাও। বহু মেয়েরা মিছিল কিংবা  বিক্ষোভের সামনের সারিতে ছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল মিছিলে অংশ নেয়া তাদের সহপাঠী কিংবা ভাইদের রক্ষা করা। ধারণা করা হয় মেয়েরা সামনের সারিতে থাকলে আন্দোলনকারীদের  ওপর পুলিশ হয়তো সেভাবে চড়াও হবে না। কিন্তু এই ধারণা এবার কাজে লাগেনি। মেয়েরাও আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু তারা রাস্তা ছেড়ে যায়নি। শুরু থেকে শেষ অবদি তারা তাদের উপস্থিতির জানান দিয়েছে। 

ছাত্র আন্দোলনে ছেলেদের পাশাপাশি নারীরাও সফল সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করেছে। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক উমামা ফাতিমা বলেন, ‘গত জুনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু সময় যত গড়ায়, বিশেষ করে জুলাই মাসে যখন মূল আন্দোলন শুরু হয়, তখন ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রী হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে গ্রন্থাগারের সামনে এসে জড়ো হতেন এবং সেখান থেকে শাহবাগ মোড়ে যেতেন। পরবর্তী সময়ে পুরো আন্দোলনের গতিমুখ নির্ধারিত হয়েছে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের কারণে। নারী শিক্ষার্থীরা যদি এত ব্যাপক হারে অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা না রাখতেন, তাহলে আন্দোলনের ওপর অত্যাচারের মাত্রাটা অনেকখানি বেড়ে যেত এবং আন্দোলন সফল না হওয়ারও আশঙ্কা ছিল।

আন্দোলনের সময় ডিবি কার্যালয়ে আটক থাকা আরেক সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনি আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহন নিয়ে বলেছেন, ‘নারীদের অংশগ্রহন ছাড়া এ আন্দোলনের সফলতা অনেকটাই অনিশ্চিত ছিলো। তারা আন্দোলনের সামনের দিকে থাকায় ভালো প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিলো। নারীরা এই আন্দোলনের প্রাণ ছিলো। 
১৪ জুলাই রাতে শেখ হাসিনার শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলার প্রতিবাদে মধ্যরাতে রাজু ভাস্কর্যে যে প্রতিবাদ মিছিল বের হয় তাতেই নারীদের অংশগ্রহন ছিলো লক্ষ্যনীয়। রাতে মেয়েদের হল থেকে বের হওয়া নিষেধ হওয়া সত্বেও কোনো বাধা না মেনে হলের তালা ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে।
 
১৫ তারিখের ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ , ইডেন, বদরুন্নেসা কলেজের অনেক নারী শিক্ষার্থী আহত হয়। এছাড়া পুরো আন্দোলনে কিছু নারী নিহতও হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ মেয়েদের উপর আক্রমণ করেছে। লাঠি দিয়ে ছাত্রীদের পেটানোর এসব ছবি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে তখন মানুষ আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পুরো আন্দোলন জুড়ে নারীরা তাদের সাহস ও বুদ্ধিমত্তার জানান দেয়। হামলাকারীদের প্রতিহত করতে তাদেরকে হাতা,খুন্তি, চামচ , মরিচের স্প্রে, পেস্ট ইত্যাদি নিয়ে  আন্দোলনে অংশগ্রহন করতে দেখা যায়। 

১৫ জুলাই ছাত্রলীগের হামলায় আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী সিনথিয়া মেহরিন সকাল বলে, আমরা শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। যৌক্তিক এই আন্দোলন শুধু ছেলেদের একা ছিলো না। আমি ১৫ তারিখের হামলায় মাথায় আঘাত পেয়েছি। আমার মাথায় সাতটি সিলাই লেগেছে। তবুও আমার আফসোস নেই। কারন আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি।যদি আবার প্রয়োজন হয় আমরা আবার রাস্তায় নামবো। 

হামলার স্বীকার ইডেন কলেজের আরেক নারী শিক্ষার্থী অর্পিতা বলেন, আমরা যখন ঘরে বসে দেখছিলাম আমাদের ভাইয়েরা রাস্তায় মার খাচ্ছে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। আমাদের মনে হয়েছে এই দাবি আমাদের, এই আন্দোলনে আমাদের যাওয়া উচিত। সেই টান থেকে আমি নেমেছি।

এছাড়া ১৬ জুলাই রাতে প্রথম রোকেয়া হলের নারীরা হল থেকে ছাত্রলীগ নেত্রীদের বের করে দিয়ে নিজ হলকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষনা করে। একে একে সেই রাতেই মেয়েদের পাচটি হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করে নারীরা। ১৭ তারিখ তাদের অনুসরণ করে ইডেন-বদরুন্নেসা কলেজের  মেয়েরাও তাদের হলকে ছাত্রলীগমুক্ত করে। পুরো আন্দোলন জুড়ে এমনই দুধর্ষ সাহসী ভুমিকা রাখে নারী শিক্ষার্থীরা। 

শুধু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনেই শেষ হয়নি নারীর অবদান। আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের  আগলে রাখতে রাস্তায় নেমেছিলো বেশকিছু নারী শিক্ষিকাও। আন্দোলনে ছাত্রদের ঢাল হয়ে দাড়াতে গিয়ে আহত হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষিকা শেহেরিন আমিন মোনামি। এছাড়াও আন্দোলন জুড়ে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন   সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গিতীয়ারা নাসরিন, সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী শেহরিনসহ বেশকিছু নারী শিক্ষিকা। 

বিশেষজ্ঞদের মতে ছাত্র জনতার এই আন্দোলনে নারীদের বিপুল অংশগ্রহনের কারনেই হতাহতের সংখ্যা অনেকটা কম হয়েছে। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ একে আরও বেগবান করেছিল, লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত করেছিল। আলোচকেরা বলছেন, জনসংখ্যার অর্ধেককে বাদ রেখে কিংবা সীমিত অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে আমাদের আন্দোলনের যে অতীত ইতিহাস, তা এবার ভেঙে গিয়েছিল। কারণ, সমাজ বিশ্লেষকেরা জানাচ্ছেন, এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ঘর থেকে। দীর্ঘ মেয়াদে শোষণের যে গল্প, যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ জমা হয়েছিল, তা ছুঁয়ে ফেলেছিল গৃহকোণ। পাঞ্জাবির কোনা ছেড়ে তা ছড়িয়ে গিয়েছিল শাড়ির আঁচলে। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরাও। আর এই ঘুরে দাঁড়ানোটা ছিল অর্থবহ। এই আন্দোলন আমাদের জানিয়ে দিল, পুরুষের হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়াই জেন জি প্রজন্মের নারী এবং তাঁদের মায়েদের চাওয়া। দেখিয়ে দিল, অর্ধেককে সুযোগ দিলে পূর্ণ হওয়া যায়। তাতে লক্ষ্য অর্জন ত্বরান্বিত হয়।


আ. দৈ. /কাশেম /ওয়াকিয়া কেয়া
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

২৪০০ আসনের বিপরীতে আবেদন ৬০ হাজারেরও বেশি
ঢাকা উত্তরের কৃষকদল নেতা রাফেলসহ কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১৬৯ জন হাসপাতালে
বিশ্বব্যাংকের ২৫০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা অনুমোদন
সোমবার থেকে টানা ৩ দিন অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আগতাড়াইল মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
ঢাকা উত্তরের কৃষকদল নেতা রাফেলসহ কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
‘আমার বুড়ো বাপকেও তুই ছাড়িসনি’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাকে গণধোলাই
ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে
বিমান বিধ্বস্তে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যুবক
বিশেষ সংবাদ- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝