নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন লক্ষ্মীপুর উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। প্রায় ২২ দিন পর নদীতে নামবেন তারা। পুরোনো ও জরাজীর্ণ নৌকা, ছেঁড়া জাল মেরামতে দিন কাটছে তাদের। আগামী ২রা নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠছে। তেসরা নভেম্বর রাত বারোটা এক মিনিট থেকে পুরোদমে চলবে মাছ ধরার কার্যক্রম।
ষাটোর্ধ্ব জেলে মোস্তফা মিয়া। লক্ষ্মীপুরের মেঘনা অংশের আলতাফ মাষ্টার ঘাট এলাকার বাসিন্দা। ছোটোবেলা থেকেই তিনি মাছ ধরা পেশার সঙ্গে জড়িত। মেঘনায় ইলিশ ধরায় তার রয়েছে প্রায় পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতা। নানানরকম অভিজ্ঞতা থাকলেও নিষেধাজ্ঞার সময়টায় তিনি ভাঙেন না আইন। নিষিদ্ধ সময় ছাড়া বাকি সময়ে মাছ ধরার কাজ করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে মাস্টার ঘাট খালের পাড়ে কথা হয় মোস্তফা মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, যখন থেকে আমার বুঝ জ্ঞান হয়েছে তখন থেকে মাছ ধরার কাজে জড়িত আছি। পঞ্চাশ বছর ধরে এ পেশায় আছি। বছরের দুটি সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তখন আমাদের জেলেরা অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। নিষেধাজ্ঞার সময়টায় আমি জাল বুনন ও নৌকা মেরামতে ব্যস্ত থাকি। মাছ ধরা শুরু হওয়ার আগে ঋণ করে বিভিন্নভাবে নৌকা মেরামত ও জাল কিনে নদীতে নামি। অবশ্য ইলিশ পাওয়ার বিষয়টি একমাত্র আল্লাহর ওপর। নদীতে নামলে অনেক সময় ইলিশ পাওয়া যায়, আবার অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হয় আমাদের।
তিনি আরও বলেন, সরকার নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা মাছ ধরা বন্ধ রাখি। তবে যে সহায়তা দেওয়া হয় তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। এজন্য অন্য কাজ করে উপার্জন করি। সরকার জাটকা রক্ষায় যে অভিযান চালায় সেটি আরও কঠোর এবং কারেন্ট জালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা দরকার। তাহলে বেশি ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
একই এলাকার জেলে সামেদ আলী, মালেক গাজী, আনোয়ার বাওয়া, হানিফ বাওয়া। নদীতে নামার জন্য তারাও জাল এবং নৌকা মেরামতের কাজ করছেন। তারা জানান, প্রায় ২২ দিন মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকলে অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হয়। কারণ মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ তারা করতে পারেন না। যে কারণে এসব জেলেরা ইলিশ পাওয়ার আশা নিয়ে এখন আবার জাল মেরামত করে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তারা বলেন, আমাদের প্রতিটি নৌকায় প্রায় ১০-১২ জন জেলে থাকে। ১২ জন জেলের ১২ পরিবার। আমাদের মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে সংসার। মাছ পাওয়া গেলে সংসার ভালো মতো চলে। না পাওয়া গেলে কষ্ট করেই চলতে হয়। সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয় বলেও জানান জেলেরা।
আ. দৈ. /কাশেম / জিহাদ